বিয়ের দাওয়াত খেতে শাহানরা কাল রাজবাড়ী যাবে। রাতে ঘুমনোর আগে বাবা শাহানকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি লঞ্চে নদী পার হবে, না ফেরিতে? শাহানের ঝটপট উত্তর, আমি ফেরিতে উঠবো।
বাবা বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা কাল সকালে সবাই মিলে ফেরিতেই নদী পার হবো। বাবার মুখে কথাটি শুনে শাহান খুবই খুশি হলো। ফেরি সম্পর্কে জানতে নানা প্রশ্ন করতে লাগলো। বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। কিছু সময় পর সে ঘুমিয়ে পড়লো।
খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগেছেন শাহানের বাবা-মা। শাহান তখনো গভীর ঘুমে। বাস ছাড়বে সকাল সাড়ে সাতটায়। তাই কোনোমতে মুখ ধুয়ে, কিছু বিস্কুট খেয়ে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়লেন তারা। বাড়ির সামনে থেকেই সিএনজি পাওয়া গেলো। তাই ঘুমিয়ে থাকা শাহানকে নিয়ে বেশি দূর হাঁটতে হলো না তাদের।
সিএনজি চলছে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের দিকে। অন্য যে কোনো সময় খিলগাঁও থেকে গাবতলী যেতে পাকা দেড় ঘণ্টা লাগে। আজ মাত্র ২৮ মিনিটে গাবতলী পৌঁছে গেল তারা। বাসের দুই ধরণের টিকেট পাওয়া গেল। একটি ‘ফেরি পারাপার’। এই বাসের যাত্রীদের বাস থেকে নামতে হয় না। বরং বাস যাত্রীসহ ফেরিতে পার হয়। অন্যটি ‘লঞ্চ পারাপার’। এই বাসের যাত্রীদের লঞ্চে পার হতে হয়। নদী পার হয়ে তারা একই কোম্পানির অন্য বাসে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছান।
বাস ঠিক সাড়ে সাতটাতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছাড়লো। মার কোলে ঘুমন্ত শাহান নড়চড়া করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো তার ঘুম ভাঙবে। মানিকগঞ্জের কাছাকাছি এসে শাহানের ঘুম ভেঙে গেলো। এদিক-ওদিক তাকিয়ে সে বুঝতে পারলো বাসে করে তারা কোথাও যাচ্ছে।
দুই ঘণ্টায় বাস পাটুরিয়া ঘাটে এসে পৌঁছালো। বাস থেকে ফেরিঘাট দেখা যাচ্ছে। শাহান খুবই খুশি হলো। দৌড়ে ফেরিতে উঠতে চাইলো। কিন্তু একবার বাস হারিয়ে ফেললে খুঁজে পাওয়াটা কঠিন। বাবা শাহানকে বোঝালেন। যাত্রী নিয়ে বাস ফেরিতে উঠলো। যানবাহন ভর্তি হওয়ার পর ফেরি ছাড়লো দৌলতদিয়ার উদ্দেশ্যে। ফেরিতে ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগে পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ায় পৌঁছাতে।
বাবা শাহানকে নিয়ে ফেরিতে ঘুরতে বেরুলেন। সাজিয়ে রাখা বাস-ট্রাকের সরু পথ অতিক্রম করে তারা সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছে গেল দুতলায়। ছোট ছোট টেবিল-চেয়ারে বসে যে যার মতো করে নাস্তা করছেন। চেঁচামেচি আর ধোঁয়ার গন্ধে শাহানের ভালো লাগছে না। বাবা শাহানকে কেক কিনে দিলেন। সেটি খেতে খেতে তারা তৃতীয় তলায় উঠলো।
সেখানে সরু গলিতে ছোট ছোট রুম দেখতে পেল তারা। সবগুলোরই দরজা বন্ধ। শাহান জিজ্ঞেস করতেই বাবা বললেন, এগুলোর নাম কেবিন। এটি ভাড়া নিয়ে মানুষ থাকে, ঘুমায়। এরপর চারতলায় উঠে গেল তারা। ফাঁকা জায়গা, শো শো বাতাস। অনেক উপর থেকে নদীতে ছুটে চলা নৌকা আর ট্রলারকে খেলনা মনে হচ্ছিল শাহানের কাছে। তার বারবার খেলনা নৌকার কথা মনে হতে লাগলো। শাহান বাবাকে কাগজের নৌকা বানিয়ে দিতে বললো নদীতে ছাড়বে বলে। বাবা বোঝালেন। কিন্তু শাহান মানতে নারাজ। তাকে নৌকা বানিয়ে দিতেই হবে।
হঠাৎ, শাহানের চোখ পড়লো একটি কক্ষের দিকে। তার গায়ে লেখা ‘চালক’। বোঝা গেল এটি ফেরিচালকের রুম। শাহান দৌড়ে সেদিকে যেতেই চালক ইশারায় শাহানকে ভেতরে ডাকলেন। পাশে বসালেন। শাহান ছোট মানুষ। নদীর কিছুই দেখতে পারছে না সে। চালক এক সময় শাহানকে তার সামনের লম্বা পাটাতনের উপর দাঁড় করিয়ে দিলেন। শাহান পায়ের সামনের দিকে ভর দিয়ে আরেকটু উঁচু হয়ে নদী দেখতে লাগলো। খুবই ভালো লাগছে তার।
ফেরিঘাটের কাছাকাছি চলে এসেছে। উপরে থাকা সবাই নিচে নামছে। শাহানও বাবার হাত ধরে নিচে নামার জন্য অপেক্ষা করছে।
উৎস: বিডি নিউজ
ছোটগল্প: পারাপার
Reviewed by Razu Mondal
on
August 15, 2019
Rating: 5

Post Comment
No comments