Breaking News

“হার মানলে চলবে না, হতাশার উল্টো পিঠেই সফলতা” - উদ্যোক্তা খাদিজা আক্তার শাম্মী।।

“হার মানলে চলবে না, হতাশার উল্টো পিঠেই সফলতা” - উদ্যোক্তা খাদিজা আক্তার শাম্মী।।

বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া, বাংলার মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সহ আরও অসংখ্য খ্যাতনামা ব্যক্তির তীর্থ ভূমি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল জেলা রংপুর। প্রখ্যাত এই জেলার তরুণ উদ্যোক্তা খাদিজা আক্তার শাম্মী।।

বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে শাম্মী’র। বিভিন্ন পরিবেশ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থেকে অর্জন করেন নানান অভিজ্ঞতা।।

রংপুর ক্যান্টনমেন্ট বীর উত্তম শহীদ সামাদ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে প্রাথমিক , বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে চতুর্থ বর্ষে অধ্যায়নরত রয়েছেন এই মেধাবী উদ্যোক্তা।।

পড়াশোনার পাশাপাশি কারমাইকেল আবৃত্তি সংসদ সংগঠনের সাথেও যুক্ত রয়েছেন শাম্মী। বাবা-মা তিন ভাই বোন সহ পাঁচজন সদস্যের পরিবারের বড় সন্তান শাম্মী। স্বপ্ন দেখেন একজন আদর্শবান ভালো মানুষ হওয়ার। সব সময় কাজ করতে চান দেশের জন্য, মানুষের জন্য।।


নিজের খরচ নিজে চালানো আর স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকেই ব্যবসার প্রাঙ্গনে পদার্পণ শাম্মী’র। টিউশনি করে জমানো সামান্য কিছু মূলধন নিয়েই শুরু হয় শাম্মী’র স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথ চলা। স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়েই যাত্রা শুরু করে শাম্মী’র অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান “জোনাকি”।।

শাম্মী বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নাম “জোনাকি”। “জোনাকি” যেমন নিজের সর্বস্ব আলো দিয়ে অন্যের ঘরকে আলোকিত করে তেমনি আমার কাজের মাধ্যমে সবার মাঝে আলো ছড়াতে চাই। আমি দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছি। “জোনাকি”তে বিভিন্ন ধরনের মেটালের গয়না, জার্মান সিলভারের এর গয়না, বিভিন্ন বিডসের গয়না, কাঠের গয়না, ফুলের গয়না এবং বিভিন্ন কাঁচামালের সমন্বয়ের মাধ্যমে সিগনেচার গয়না তৈরি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তাঁতের শাড়ি এবং পাঞ্জাবিতে হ্যান্ড পেইন্ট করে প্যাকেজ হিসেবে কাজ করা হয়। সামনে আরো নতুন কিছু নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে।।

“জোনাকি”র অগ্রযাত্রা নিয়ে শাম্মী জানান, ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু জানার এবং শেখার প্রবল ইচ্ছা ছিল। কারো কোন কিছু বানাতে দেখলেই সেই বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠতাম। সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়েই প্রথম হাতের তৈরি নকশা করে জামা বানাই। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সৌখিন জিনিসপত্র বানানোরও ঝোঁক ছিল অনেক।।

স্নাতক ভর্তি হবার পর থেকেই মনে প্রবল ইচ্ছা জাগে নিজেকে স্বাবলম্বী করার। অনলাইন বিজনেস গুলোও বেশ প্রচলিত হয়ে উঠেছে। নিজেকে সেইফ রেখে তাই অনলাইনের মাধ্যমেই বিজনেস করার সিদ্ধান্ত নিলাম। স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য বেশকিছু প্রশিক্ষণ নিলাম। মোটামুটি কিছু দক্ষতা অর্জন করে শুরু করলাম আমার উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা। নিজের জমানো টিউশনির টাকা দিয়ে শুরু। বিভিন্ন ধরনের মেটালের গয়না, জার্মান সিলভারের গয়না, বিভিন্ন বিডসের গয়না, কাঠের গয়না, ফুলের গয়না এবং বিভিন্ন কাঁচামালের সমন্বয়ের মাধ্যমে তৈরি করা সিগনেচার গয়না নিয়ে কাজ শুরু করি। ব্যবসাটা ছোট পরিসরে শুরু করা হলেও প্রচুর সাড়া পেয়েছি। প্রথম একজনের হলুদের গয়না দিয়ে শুরু করা হয় এই যাত্রা। অনলাইনে শুরুর আগে অফলাইনেও ভালো সেল করি। অনলাইনে মানুষের ভরসা পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়। তবে পণ্যের গুনগত মান ভালো হওয়ায় দ্রুতই কাস্টমারের মনে জায়গা করে নিচ্ছি।।

ব্যবসার শুরুতে লোকে কি বলবে, না বলবে এসব ভেবে নিজেই ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম। তবুও সাহস করে শুরু করা। পরিচিতদের কাছ থেকেই শুনতে হয়েছে অনেকে অনেক কথা। মেয়ে মানুষ আবার কিসের ব্যবসা। ঠিকভাবে পড়াশোনা করো ভালো চাকরি করো এসব দুই-চার টাকার জন্য এত কষ্ট করা কেন। এছাড়াও অর্থনৈতিক, সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণাও সইতে হয়েছে অনেক। এখনও অনেক কথা শুনতে হয় তবে এখন আর এসব কথা গায়ে লাগে না, নিজেকে কষ্ট দেই না।।

আমার কাজে প্রধান অনুপ্রেরণা হলো আমার মা রহিমা আক্তার। প্রিয় বন্ধু রুপম ও নুসরাত, ছোট বোন সুস্মি, ভাই সৈকত আকাশ তারাও সব সময় কাজের অনুপ্রেরণা দেয়। ওদের সকলের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।।

ভবিষ্যৎ নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে শাম্মী বলেন, সবার মধ্যেই সুপ্ত প্রতিভা আছে তা জাগ্রত করতে হবে কাজের মাধ্যমে। সাহসিকতা, আত্মবিশ্বাস এবং ধৈর্যের মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। লক্ষ্য স্থির করুন, লেগে থাকুন সাফল্য একদিন আসবেই। সফলতা কেউ আপনার হাতে তুলে দিবে না। পরিশ্রম করুন, নিজেকে জানুন, কাজ সম্পর্কে প্রচুর পড়াশোনা আর রিসার্স করুন। সব সময় নিজেকে নিয়ে ভাবুন, পরিবারকে নিয়ে ভাবুন তাহলে কাজের অনুপ্রেরণা নিজেই পাবেন। নিজের উপর বিশ্বাস রেখে সততার সাথে কাজ করলে সফলতা আসবেই। হার মানলে চলবে না, হতাশার উল্টো পিঠেই সফলতা তাই হতাশাকে চেপে ধরে সামনের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।।

জোনাকিকে নিয়ে বেশ বড় পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান শাম্মী। জোনাকি নামের যথাযথ ব্যবহার করা, দেশীয় পণ্য নিয়ে ই-কমার্স জগতে নতুন ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলা এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাই প্রধান লক্ষ্য বলে জানান এই স্বপ্নবান তরুণ উদ্যোক্তা।।

স্বপ্নবান এই তরুণ উদ্যোক্তার স্বপ্ন সফল হোক। লক্ষ্য অটুট থাকুক। পরিশ্রম সার্থক হোক। প্রচেষ্টা গুলো বাস্তবায়ন হোক। সকল বাঁধা পেরিয়ে আরও বহুদূর এগিয়ে যাক শাম্মী।।

আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ খাদিজা আক্তার শাম্মী। শুভকামনা।।

No comments