তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার---ড: শিরিন শারমিন চৌধুরী
নেপালে ইউ এস বিমান দূর্ঘটনায় এক মিনিট নিরবতা পালন এবং এলাকা বাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার ভাষণ শুরু করেন:
“আজকে পীরগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নের দিকে যদি আমরা একটু তাকাই, তাহলে দেখতে পাই- এখানে মেরিন একাডেমি স্থাপনের কাজ হয়েছে। এখানে টেক্সটাইল কলেজ স্থাপন হয়েছে। শহীদ মিনারের কথাটি আমি আগেই বলেছি। আমরা একটি মডেল মসজিদ করার পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছি। সেই সাথে আরো অনেক! যাতে পীরগঞ্জের মানুষ কর্মসংস্থান পায় সেই বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখে তাদের কে এগিয়ে আনার জন্য এই বড় বড় প্রকল্পগুলো এখানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আজকে ১১ নম্বর পাঁচগাছী ইউনিয়নে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, এবং এই যে জাহাঙ্গীরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়; সেটার যে একাডেমিক ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ সেটার জন্যেও কিন্তু আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, এবং যে ২৬ টা প্রতিষ্ঠান পীরগঞ্জে তাদের একাডেমিক ভবন উর্ধ্বমূখী করার তালিকা আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি, তার মধ্যে জাহাঙ্গীরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় আছে। এরপরে আরো আমোদপুর সহ যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যে মহাবিদ্যালয় গুলো আজকে এমপিও ভূক্তিকরণের জন্য কথা বলছেন, আমি তাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই- যে এমপিও ভূক্তির বিষয়টি আজকে সারা বাংলাদেশের বিষয়। এটা শুধু পীরগঞ্জের একার বিষয় না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে এমপিও ভূক্তি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে, আমি অবশ্যই সেখানে পীরগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেগুলো এখনো এমপিওভূক্ত হয়নি, কিন্তু যেখানে অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ভাবে লেখাপড়া করছে, ভালো ফলাফল করছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা যেন অন্তর্ভূক্ত করতে পারি সেটার জন্যে আমি অবশ্য-অবশ্যই চেষ্টা করে যাবো। সমগ্র পীরগঞ্জ উপজেলায় আজকে ৩৭টি শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এটা অন্য যে কোনো নির্বাচনী এলাকার চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশী। এর কারণ- এই জাহাঙ্গীরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়েও শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। কাজেই তথ্য ও প্রযুক্তিতে আজকের যুব সমাজকে, তরুণ সমাজকে যুক্ত করার জন্য; তাদের কে এগিয়ে আনার জন্য আমরা এই কাজগুলো করে যাচ্ছি। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ খুবই জরুরী। সবার হাতে আজকে মোবাইল ফোন। ইন্টারনেটের সংযোগ যেটা ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারণে সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ আজকে বাংলাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। আজকে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে আপনারা নানা ধরনের তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। কাজেই আমি শিক্ষার্থী ভাই-বোনদেরকে বলতে চাই যে, তোমরা একটা সুবর্ণ সময়ে অবস্থান করছ। তোমাদের জন্যে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিশেষ সুযোগ-সুবধিাগুলো দিচ্ছেন, আজকে শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পাচ্ছে। এবং এই উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের মায়েদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যাতে সঠিকভাবে এই টাকাটি ছাত্র-ছাত্রীদের কাজে লাগে। যে মায়েদের কাছে মোবাইল ফোন ছিলনা, তাদেরকে মোবাইল ফোন পর্যন্ত সরকার দিয়েছে যাতে এই উপবৃত্তির টাকাগুলো তারা পেতে পারে। কাজেই এই যে সুযোগগুলো, বিনামূল্যে পাঠ্য-পূস্তক বই প্রতি বছরের প্রথমে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও মেয়েদেরকেও সমান ভাবে লেখাপড়ায় এগিয়ে আনা এবং কম বয়সে কোনো মেয়েকে যাতে বাল্য বিবাহ না দেয়া হয় সে ব্যাপারে আজকে সারা বাংলাদেশে যে ব্যপক সচেতনতা মূলক কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে, তার কারণে আমরা এখন অনেক-অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। আজকে আমাদের মেয়েরা সচেতন, আমাদের অভিভাবকরা সচেতন, আমাদের পিতা-মাতারা সচেতন, আমাদের শিক্ষকরা সচেতন। আমরা চাই আমাদের মেয়েরা শিক্ষিত হোক, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করুক এবং তারা সমাজ, পরিবার এবং জাতীয় জীবনে অবদান রাখুক।
কাজেই তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে এবং যে সুযোগ গুলো সরকার করে দিয়েছে সেগুলোকে আমাদের সবাইকে, আমাদের ছেলে মেয়ে সকলকেই কাজে লাগাতে হবে। মায়েদের উদ্দেশ্যে বলি, আপনারা এখানে একটা কমিউনিটি ক্লিনিকের দাবী করেছেন, আমি এ বিষয়টা দেখব এবং যদি এই ৬ হাজার মানুষের জন্য এক একটা করে কমিউনিটি ক্লিনিক সরকার করে, সেই রকম চাহিদার ভিত্তিতে আমরা যদি পারি এখানেও আমরা আর একটি কমিউনিটি ক্লিনিক করা যায় কি-না আপনাদের দাবীর প্রেক্ষিতে আমি সেই বিষয়টি অবশ্যই দেখব। যাতে মায়েদের স্বাস্থ্যের সব রকম সেবা নিশ্চিত করা যায়। আজকে দরিদ্র মা যারা, তাদের জন্য বিধবা ভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, গর্ভবতী মা যারা তাদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, ল্যাকটিটিং মায়েদের ভাতা, নানান ধরনের কার্যক্রম বিটিডি কার্যক্রম যার মাধ্যমে একটা দরিদ্র নারী প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল পান। এবং সেই সাথে তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে পীরগঞ্জের ৯ নং ইউনিয়নে একটা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছি, এবং সেখান থেকে অনেক নারীরা ইতোমধ্যে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহন করছেন। আমরা জানি যে, সেলাই প্রশিক্ষণের অনেক চাহিদা আছে। সেই কারণে আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ০৩ টা করে ইউনিয়ন যে গুলো কাছাকাছি; ০৩ টা করে ইউনিয়নে আমরা একটা করে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করব। যাতে মায়েদের অনেক দূরে যেতে না হয়। তারা যাতে তাদের ইউনিয়নের কাছাকাছি থেকে এই প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে পারে। সেই সাথে আরো অন্যান্য যে সুবিধা গুলো প্রয়োজন, একজন এখানে প্রস্তাব করেছেন- ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল অবশ্যই আমরা সেটা বিবেচনা করব। রাস্তা-ঘাটের কথা এসেছে। অনেক রাস্তা-ঘাট করা হয়েছে; আরো করা হবে। এ ব্যাপারে আপনার আশ্বস্ত থাকেন। খুব শিঘ্র সময়ে একটা ৮৭ কোটি টাকার রাস্তা উন্নয়নের একটা প্রকল্প সরকার পীরগঞ্জে বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেবে। সেটা পর্যায়ক্রমে হবে। প্রথম ২০১৭-১৮ এই অর্থ বছরে ২০ কোটি টাকার রাস্তা হবে এবং সেখানে পাঁচগাছীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাকে অবশ্যই আমরা অন্তর্ভূক্ত করে দিব। কাজেই কোনো উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেউ পিছিয়ে থাকবেনা। পীরগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়ন এগিয়ে যাবে, সেই সাথে ১১ নং পাঁচগাছী ইউনিয়নও এগিয়ে যাবে। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ক্ষুধা মুক্ত, দরিদ্র মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চান। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই, আর সেটার জন্য তিনি যে কাজ করে যাচ্ছেন- সেটার কাণে আজকে ২০২১ সালের ভিতরে এখন যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ সেটা মধ্যম আয়ের দেশ হবে এবং সেই সময় খুব বেশী দূরে না। এবং সেটার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ঘোষণা আসবে। আপনারা জানেন যে, আমাদের ২২ মার্চ সারা বাংলাদেশে আমরা উৎসব করব যে আমাদের বাংলাদেশ যে মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, যে আমাদের বাংলাদেশ যে আজকে উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেটার ব্যাপারে একটা বড় ঘোষণা আসবে এবং আমরা সেটা উদযাপন করব উৎসব মূখর পরিবেশে। কাজেই, পীরগঞ্জের যে উন্নয়ন সেটা হবে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন। আমরা গত পাঁচ বছরে এই উন্নয়নের কাজ করে চলেছি, আগামী দিনেও যদি আপনারা সেবা করার সুযোগ দেন- যে অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজগুলো আছে, সেগুলোকেও আমরা অবশ্যই এগিয়ে নেব। এখানে, পাঁচগাছীতে আমরা জানি, বন্যার সময় যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল, সেখানেও আমরা সর্বাত্মক সহযোগীতা এবং ত্রাণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সমগ্র পীরগঞ্জে প্রায় ৯ হাজার ৮ শো এর বেশি শীত বস্ত্র এবং কম্বল এই শীতকালীণ সময়ে বিতরন করেছি। এরকম ভাবে বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু আমি আপনাদেরকে এতটুকু বলতে চাই যে, কোনো ইউনিয়ন পীরগঞ্জে পিছে থাকবেনা। পাঁচগাছী ইউনিয়নও পিছে থাকবেনা। আপনারা যে দাবীগুরো উথ্থাপন করেছেন, আমরা প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট ভাবে নোট করেছি এবং আমি আশা করি সেগুলো পূরণে, বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাবো।
আপনারা সবাই ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন, এবং আপনাদের সহযোগীতা চাই, আপনাদের দোয়া চাই, এবং আপনাদের সহযোগীতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে পীরগঞ্জ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা সবাই একত্রে কাজ করে গড়ে তুলব। এটাই হোক এই মাসে, এই স্বাধীনতার মাসে আমাদের সকলের প্রতিজ্ঞা এবং প্রত্যয়। আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
সরাসরি রেকর্ড থেকে।
শব্দ ধারণ ও গ্রন্থনা: মো: রাংগা সরকার।
কৃতজ্ঞতা: বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, ১১ নং পাঁচগাছী ইউনিয়ন শাখা।



No comments