Breaking News

পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন দেশপ্রেম, টিমওয়ার্ক, প্রতিজ্ঞা ও আন্তরিকতা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে গেছে বাংলাদেশ। সকল সেক্টরে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে সরকার। প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির শুভ সূচনা করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শুরু থেকেই শিক্ষার অধিকার ও মানব উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান করে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গ্রহণ করেছে নানাবিধ যুগান্তকারী কর্মসূচি।
২০১৩ সালে প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রাথমিক শিক্ষার দৃশ্যপট পরিবর্তন করে দেয় গ্রামাঞ্চলে। বছরের প্রথম দিনেই সকল শিক্ষার্থীর হাতে রঙিন বই তুলে দেয়া, ৫টি নৃ-গোষ্ঠীর ভাষায় বই ছাপানো ও বিতরণ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই ছাপানো, বিদ্যালয়বিহীন ১৪৯৫টি গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে উপবৃত্তি কার্যক্রম শুরু করা, অনগ্রসর এলাকায় স্কুল ফিডিং চালু, সরকারি বিদ্যালয়ে দপ্তরি-কাম-প্রহরী নিয়োগ, স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টসহ নানাবিধ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন, শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমূখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগসহ নানাবিধ কার্যক্রম প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে বহুদূর।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতির সামনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপন করেছেন যার নাম “সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ”। উক্ত দলিলে তিনি জাতির সামনে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেছেন, যার একটি হলো সকল স্তরে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি প্রয়োজন স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং প্রাথমিক শিক্ষার সাথে যুক্ত সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের টিমওয়ার্ক ও সক্রিয় অংশগ্রহণ। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করলেও সর্বত্র তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় না বা সর্বত্র এর ব্যবহার হয়না। ফলে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় খুব ভাল, অনেকগুলো মধ্যম মানের আবার কিছু আছে বেশ দুর্বল।
‘সরকার একাই সব সমস্যা সমাধান করে দেবে’- এই ধারণা থেকে সকলকে বের করে আনা এবং স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোগের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে শিক্ষার মান নিশ্চিত করার জন্য ময়মনসিংহ জেলায় গড়ে তোলা হয়েছে ক্রিয়েটিভ টিচার্স ফোরাম। মূলতঃ জেলা প্রশাসক হিসেবে নওগাঁ জেলায় কাজ করার সময় ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ তারিখে শিক্ষকদের সাথে অনুষ্ঠিত এক সভায় ক্রিয়েটিভ টিচার্স ফোরাম গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। “Let’s work together and perform and contribute better than yesterday”- এ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে গঠন করা হয় এ ক্রিয়েটিভ টিচার্স ফোরাম। পরিবর্তনের জন্য যোগ্যতার পাশাপাশি দরকার Empathy, দেশপ্রেম, ভালো কিছু করার প্রতিজ্ঞা, টিমওয়ার্ক ও আন্তরিকতা- এ বিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে শিক্ষকরা ১১ টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজে নেমে পড়ে।
গ্রুপগুলো হলোঃ School Environment, Better Classroom, Teaching Method, Community Engagement, Co-curricular Activities, Attendance- Teacher & Student, Attitude Boost Up, Teacher Support Network, Relationship between Teacher & Administration, Motivating Parents এবং Award System. প্রতিটি গ্রুপের একজন করে লিডার নির্বাচন করা হয়। গ্রুপগুলোর কাজের আওতা নির্ধারণ করা হয় এবং সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। গ্রুপগুলো তাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক করবে এবং নিম্নোক্ত কার্যাবলী সম্পন্ন করবেঃ 
১. সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিদ্যমান অবস্থা (As It Is Now) বিশ্লেষণ করা; 
২. বিদ্যমান অবস্থা পর্যালোচনার পর SWOT বিশ্লেষণ করা; 
৩. সংশ্লিষ্ট অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য কর্মপন্থা নির্ধারণ বা আইডিয়া চূড়ান্ত করা এবং PAR (Problem, Action & Result) ডিজাইন করা; 
৪. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কয়েকটি বিদ্যালয়ে আইডিয়া পাইলটিং করা এবং অন্যান্য বিদ্যালয়ে রেপ্লিকেট করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা; 
৫. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সুপারিশ প্রণয়ন করে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করা। উল্লিখিত গ্রুপগুলি নিম্নোক্ত সুনির্দিষ্ট কাজ করবে।
Group: School Environment: বিদ্যালয়ের পরিবেশ আকর্ষণীয় ও সুন্দর করা। বিদ্যালয়কে আনন্দ পাঠের তীর্থস্থান হিসেবে গড়ে তোলা এ গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বিদ্যালয়ে এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলা যাতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসার জন্য মরিয়া হয়ে থাকবে। যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ 
১. বিদ্যালয়ের বিল্ডিং, সীমানা প্রাচীর ও গেইট এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং সুদৃশ্য করা; 
২. ওয়াশ ব্লক তৈরী ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সেগুলোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা; 
৩. সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা; 
৪. খেলাধুলার জন্য মাঠ সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা; 
৫. সুন্দর পতাকা স্টান্ড, শহীদ মিনারসহ মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার নির্মাণ করা; 
৬. নীতিবাক্য, নোটিশ বোর্ড ও দেয়ালিকা ব্যবহার; 
৭. বাগান তৈরী করা ইত্যাদি।
Group: Better Classroom: বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসরুমের পরিবেশ আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে ক্লাসরুমকে আনন্দমূখর ও আরামদায়ক করে তোলা এ গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ গ্রুপ যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ ১. ক্লাসরুমে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্লাসরুমের পরিবেশ আকর্ষণীয় ও সুন্দর করা; ২. ক্লাসরুমগুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও সুসজ্জিত রাখা; এবং ৩. শ্রেণিকক্ষে নানা রকম উপকরণ দিয়ে ক্লাসরুম সাজানো যাতে ক্লাসরুমে সবার থাকতে ভাল লাগে।
Group: Teaching Method: গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান শিক্ষাদান কৌশলের সাথে নতুন নতুন সৃজনশীল কৌশল যুক্ত করে শিক্ষাদান নিশ্চিত করা এ গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ গ্রুপ যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ 
১. লেকচার ও গ্রুপ ওয়ার্কের পাশাপাশি নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করে শিক্ষাদান নিশ্চিত করা; 
২. লেসন প্লান নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা উপকরণ তৈরী ও তা ব্যবহার করা; 
৩. মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার বাড়ানো এবং 
৪. শিক্ষাদানকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর করার জন্য কাজ করা।
Group: Community Engagement: গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকার কমিউনিটির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন নতুন সৃজনশীল কৌশল যুক্ত করে স্থানীয়ভাবে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এ গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ গ্রুপ যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ 
১. এসএমসির নিয়মিত সভা অনুষ্ঠান, সভাকে কার্যকর করা এবং কমিটির সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; 
২. এসএমসি ছাড়াও কমিউনিটির উৎসাহী মানুষকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত করা; 
৩. মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ ও পিটিএ এর নিয়মিত সভা অনুষ্ঠান ও তা ফলোআপ করা; এবং 
৪. বিদ্যালয়কে অধিকতর কার্যকর করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার কর্মপন্থা নির্ধারণ করা।
Group: Co-curricular Activities: লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সৃজনশীল কার্যক্রম যুক্ত করে বিদ্যালয়কে আনন্দদায়ক করা। এ গ্রুপ যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ 
১. সবার মাঝে শুদ্ধভাবে জাতীয় সঙ্গীত চর্চা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করা;
২. সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চা নিশ্চিত করার কর্মপন্থা নির্ধারণ করা; 
৩. কাব স্কাউটিং, শরীর চর্চা ও খেলাধুলা নিশ্চিত করা; 
৪. বিজ্ঞান ক্লাব, আইসিটি ক্লাব, সততা স্টোর, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, ক্ষুদে ডাক্তার টিম, স্পোর্টস ক্লাব ও মানবতার দেয়াল প্রতিষ্ঠা করা এবং কার্যকর করা;
৫. শিক্ষা সফর নিশ্চিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার প্রতিষ্ঠা করা; এবং 
৬. যথাযথভাবে বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করা ও সামাজিক কার্যক্রমে যোগদানে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা।
Group: Attendance- Teacher & Student: যথাসময়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নতুন নতুন সৃজনশীল কৌশল যুক্ত করে তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এ গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ গ্রুপ যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ 
১. শতভাগ উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য এসএমসি ও কমিউনিটির মানুষকে যুক্ত করা; 
২. শিক্ষার্থীদের স্কুলভীতি ও পাঠভীতি দূর করার কৌশল নির্ধারণ করা; এবং 
৩. শতভাগ উপস্থিতি ট্র্যাকিং ও নিশ্চিত করার জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও কৌশল ব্যবহার করা।
Group: Attitude Boost Up: গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষার সাথে যুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা এ গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ গ্রুপ যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ 
১. শিক্ষকদের দেশপ্রেম, টিমওয়ার্ক, আন্তরিকতা ও মনোবল বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করা; 
২. শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমিক ও সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানাবিধ গেমস ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা; ৩. অভিভাবকদের সন্তান ও শিক্ষার প্রতি অধিকতর আন্তরিক করার লক্ষ্যে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং 
৪. শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক ও কমিউনিটির দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করা।
Group: Teacher Support Network: গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের মধ্যে কার্যকর নেটওয়ার্ক তৈরীর মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন ও বিনিময়ে কার্যকর ও সৃজনশীল পন্থা উদ্ভাবন করে তা প্রয়োগ করা এ গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ গ্রুপ যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ 
১. দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের মধ্যে কার্যকর নেটওয়ার্ক তৈরী;
২. মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিতকরণে উপকরণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় নিশ্চিত করা; এবং 
৩. নিজেদের সকল সৃজনশীল কাজ ও কৌশলসমূহ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কৌশল বের করা;
Group: Relationship between Teacher & Administration: গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসএমসি, শিক্ষা বিভাগ ও শিক্ষকদের সম্পর্ক অধিকতর উন্নত করা এ গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ গ্রুপ যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ 
১. কাজের পরিধি নিয়ে সকল পক্ষকে অবগত করিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়মিত মোটিভেশনাল কাজ করা; 
২. এসএমসির সভা করতে হবে এবং 
৩. স্থানীয়ভাবে প্রণোদনা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
Group: Motivating Parents: লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সন্তানদের পিতামাতাদের অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করার জন্য নতুন নতুন সৃজনশীল কৌশল যুক্ত করে তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এ গ্রুপ যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ 
১. শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্ক উন্নয়ন; . হোম ভিজিট ও উঠান বৈঠক নিশ্চিত করা; 
২. বার্ষিক ক্রীড়া কর্মকান্ড ও জাতীয় দিবস উদযাপনে পিতা-মাতাকে যুক্ত করা; 
৩. বাড়িতে সন্তানদের দেখভাল করার জন্য অভিভাবকদের জন্য প্রশিক্ষণ বা বিশেষ কোর্স আয়োজন করা; এবং 
৪. মা সমাবেশের পাশাপাশি পিতা সমাবেশ এবং পিতামাতাকে অধিকতর দায়িত্বশীল করার জন্য তাদের যুক্ত করে বনভোজন ও বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা।
Group: Award System: গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের সাথে যুক্ত সকল পক্ষের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা খুঁজে বের করা ও তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এ গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ গ্রুপ যে সকল বিষয় নিয়ে কাজ করবেঃ 
১. শিক্ষকদের জন্য স্থানীয়ভাবে প্রণোদনার সুপারিশ ও মানদন্ড প্রণয়ন করা; 
২. সুনির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য পুরষ্কারসহ অন্যান্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা; 
৩. এসএমসিসহ প্রাথমিক শিক্ষার সাথে যুক্ত কমিউনিটির মানুষকে পুরস্কার প্রদানসহ অন্যান্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা; 
৪. প্রাথমিক শিক্ষার সাথে যুক্ত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জন্য স্থানীয় প্রনোদনার মানদন্ড সুপারিশ করা এবং 
৫. প্রাথমিক শিক্ষার সাথে যুক্ত অন্য যে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রনোদনার মানদন্ড প্রণয়ন ও সুপারিশ করা।
উল্লিখত গ্রুপগুলো শিক্ষকদের আন্দোলিত করে সর্বত্র শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করে। প্রথমে তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন এবং সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানের জন্য আইডিয়া তৈরি করে এবং ১ হতে ৩ টি বিদ্যালয়ে পাইলটিং করে পরীক্ষা করে দেখে যে, তাদের আইডিয়াটি কাজ করবে না। আইডিয়াটি সফল হলে আশেপাশের অন্যান্য বিদ্যালয়ে রেপ্লিকেশন এর কাজ শুরু হয়। এভাবে শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে নানাবিধ উদ্যোগের সাথে নিজেদেরকে যুক্ত করে এবং বিদ্যালয়গুলোকে সুন্দর করে তোলে। শুধু বিদ্যালয়ের বাইরের পরিবেশ নয়, বদলে গেছে ক্লাসরুমের দৃশ্যপটও। সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে একটি টিমওয়ার্ক। ঘুম ভেঙেছে আশেপাশের সকলের।
বিদ্যালয়ের পরিবেশ এতটাই বদলে গেছে যে কোথাও নেই নোংরা, ময়লা-আবর্জনা। শিক্ষকদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য ঘোষণা করা হয় জেলা শিক্ষা পদক। উল্লিখিত উদ্যোগসমূহ নওগাঁ জেলায় ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখার পর জেলা প্রশাসন, ময়মনসিংহ এর উদ্যোগে ময়মনসিংহ জেলায় ৩১ জুলাই ২০১৯ তারিখ উল্লিখিত ক্রিয়েটিভ টিচার্স ফোরাম গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে পরিবর্তনের কর্মযজ্ঞ। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার ৩১ নম্বর সত্রাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক জনাব শাহনাজ বেগম ও তার টিম গত ৫ মাসে বদলে দিয়েছেন তাদের বিদ্যালয়ের চেহারা। এ রকম উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে ময়মনসিংহ জেলার সর্বত্র।
পরিবর্তন আনার জন্য সবাইকে খুব বড় বড় পদ বা ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে, তা নয়- এর বড় প্রমাণ রেখে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ জেলার ১৩ টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর করার জন্য কারো নির্দেশের প্রয়োজন নেই; বরং দেশপ্রেম, টিমওয়ার্ক, প্রতিজ্ঞা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে পরিবর্তন আনা সম্ভব – তার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন ময়মনসিংহ জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। টয়লেট, ক্লাসরুম, বাইরের পরিবেশ, শিক্ষা পদ্ধতি, উপস্থিতি- সর্বত্র পরিবর্তনের ছোঁয়া। ময়মনসিংহ জেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের উৎসাহিত করার জন্য ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা পদক প্রদানের ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে। আশাকরি এসকল উদ্যোগের ফলে ময়মনসিংহ জেলার প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে এবং এ জেলায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে।

1 comment:

  1. আগে আমাদের নিজের বিবেক কে জাগ্রত করতে হবে

    ReplyDelete