Breaking News

শেখ হাসিনার শাসনামল (‎‎১৯৯৬-২০০১) উন্নয়নে বাংলাদেশ-(২য় ধাপ)

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান খালেদা জিয়া ও এরশাদের দীর্ঘ শাসনামলে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির ডালপালা বিস্তৃত হবার ফলে দেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলেও ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে ২৩শে জুন শেখ হাসিনা উন্নয়ন আর অগ্রগতির লক্ষ্যে গঠন করেন ঐক্যমতের সরকার। স্বাধীনতার পর দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এ সময়ে এক নজির স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। -শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশটিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করে তোলা। ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় কৃষি খাতের উপর। কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্যে সার ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পায় তা এ সময় নিশ্চিত করা হয়েছিল। সেসময় পাঁচ বছরে বিতরণ করা হয় ২৫০০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ। ফলে বাম্পার ফলন হয়েছিল। ৯৯-২০০০ অর্থবছরে দেশে-বিএনপি আমলের খাদ্য উৎপাদন ১ কোটি ৮০ লাখ টন থেকে ২ কোটি ৬৯ লাখ টনে উন্নীত করা হয়েছিল। যা ছিল দেশের চাহিদার চেয়ে ২৯ লক্ষ মেট্রিক টন বেশী।
-১৯৯৬ সালের ১২ই ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা হয়।
-দেশে সংগঠিত স্মরণকালের ভয়াবহ ৯৮ সালের বন্যা সফলভাবে মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার সারা বিশ্বে দুর্যোগ মোকাবেলায় সুনাম কুঁড়িয়েছে। এ ভয়াবহ বন্যায় দেশের ৭০ ভাগ ভূমি পানিতে প্লাবিত হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ বন্যা মোকাবেলায় সরকার ৬২০০০ মেট্রিক টন খাদ্য বিতরণ করে। এছাড়া ৪২ লাখ ৫০ হাজার ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ২ কোটি ১০ লক্ষ মানুষকে ৯ মাস বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। ৮ লক্ষ ৮৮ হাজার ভূমিহীন, ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষী পরিবারকে কৃষি পুর্নবাসন বাবদ অর্থ সহায়তা করা হয়। ফলে ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী দেশে দ্রুত স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসে। বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়া সেসময় বন্যা পরবর্তী অসুখ ও খাদ্য সংকটে ১ কোটি লোক মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেও শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষ নেতৃত্বে ক্ষুধা বা অসুখে কেউ মারা যায়নি।
-আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই দারিদ্র্য বিমোচনের নানা পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে একটি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলার চেষ্টা করে। প্রবর্তন করা হয় বয়স্ক ও বিধবা ভাতা। ১৯৯৬ -১৯৯৭ অর্থবছর থেকে এ ভাতা প্রবর্তন করা হয়। বয়স্ক মানুষদের শেষ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গড়ে তোলা হয় শান্তি নিবাস। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তার সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) শেখ হাসিনাকে সেরেস পদকে ভূষিত করে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আরও একটি বড় সফলতা গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা। সরকারের খাস জমিতে ছিন্নমূল মানুষের ঠিকানা করে দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছিল এ গুচ্ছ গ্রাম।
-শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ৫ বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্ত ভিত্তির উপরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। প্রবৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশে উন্নীত এবং মুদ্রাস্ফীতি ১.৪৯ শতাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
-১৯৯৮ সালের জুন মাসে ৯৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার ৫ম এবং বিশ্বের ৯২তম দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে ওঠায় সমগ্র দেশের সামগ্রীক অর্থনীতিতে এর সুফল পরিলক্ষিত হয়।
-শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় আসার পর নারীর সর্বাত্মক অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন প্রথা চালু ও পিতার সঙ্গে মাতার নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়। কর্মজীবী নারীদের শিশু প্রতিপালনের জন্য ১২টি ডে কেয়ার সেন্টার খোলা হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নেওয়া হয় নানা পদক্ষেপ।
– শেখ হাসিনা সরকারের আরেক ইতিহাস সৃষ্টিকারী সাফল্য ছিল পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর সাথে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা সরকারের বিরোধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অবহেলিত পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় এই ঐতিহাসিক চুক্তি। অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকার গড়ে তোলেন পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। গ্রহণ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসূচি। পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের জন্য ১৯৯৮ সালে তিনি ইউনেস্কোর ফেলিক্স হুফে-বউনি শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
-আওয়ামী লীগ সরকারের সফল কুটনীতির ফলে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানিবন্টন চুক্তি সম্পাদন হয়। এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দেশের দীর্ঘদিনের গঙ্গার পানিবন্টন সংকটের সমাধান হয়। দেশের শুকিয়ে যাওয়া অনেক নদ-নদী প্রাণ ফিরে পায়। দেশে পানিসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রণীত হয় জাতীয় পানিনীতি। গড়াই নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য নেয়া হয় বিশেষ প্রকল্প। বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
-শেখ হাসিনার উদ্যোগে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দান করে, ফলে সারা বিশ্বের বাঙালি এ অর্জনের জন্য হয় সম্মানিত।
-সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয়- এই মূল ভিত্তিকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার আঞ্চলিক ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে। বাংলাদেশ এ সময় এনটিপি, সিটিবিটি, ভূমি মাইন বিরোধী চুক্তি এবং রাসায়নিক অস্ত্র বিরোধী সমঝোতা অনুমোদন করে। এ্যসোসিয়েশন অফ এশিয়ান পার্লামেন্টের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত প্রথম মাইক্রো-ক্রেডিট সম্মেলনের যুগ্ম-চেয়ারপারসন ছিলেন তিনি। ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট (বিল ক্লিনটন) বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং ২০০০ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে সে দেশ সফর করেন। শেখ হাসিনা ২০০১ সালে কায়রোতে অনুষ্ঠিত ডি-৮ সম্মেলনে সভানেত্রীত্ব করেন। ২০০১ সালে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের এলডিসি সম্মেলনে তিনি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
এভাবে দেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম অর্জনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে থাকে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন করেছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ। কিন্তু ২০০১ সালের ষড়যন্ত্র ও কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা দখল করে। শুরু হয় হত্যা, নির্যাতন,দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কালো অধ্যায়। আবার পিছিয়ে পড়তে শুরু করে বাংলাদেশ।

No comments