Breaking News

অভ্যন্তরীণ বিমান ভ্রমণের খোঁজ খবর

আমরা ভ্রমণের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্নজন বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে থাকি। কেউ বা ট্রেনে, বাসে, ট্রাকে, বিমানে, প্রাইভেট গাড়িতে, কেউবা মোটর বাইকে কেউবা সাইকেলে। এই সকল মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও কিছুটা জটিল মাধ্যম হলো বিমান। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমাদের সবারই জানা আছে পাসপোর্ট, ভিসা শর্ত। কিন্তু অভ্যন্তরিন ভ্রমণের ব্যাপারে অনেকেই ওয়াকিফহাল নই আমরা। মুলত এই পাতাতে অভ্যন্তরিন বিমান ভ্রমণের ব্যাপারেই ধারণা বা তথ্য তুলে ধরা হবে।
ঢাকার সাথে চট্রগ্রাম,কক্সবাজার,সিলেট,বরিশাল,যশোর,সৈয়দপুর এর বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে বর্তমানে।

কোথায় টিকেট কাটবেন





 বিদেশ যাত্রা কিংবা দেশীয় কোন গন্তব্যে বিমানে যেতে এখন আর টিকেট কাটতে বড় কোন শহরে যেতে হবে না। আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকেই বিমানের টিকেট কিনতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দিতে পারবেন।


 

 

কিভাবে টিকেট কাটবেন

যদি অফিস থেকে টিকেট কাটেন ক্যাশ টাকা দিয়ে বা কার্ডের মাধ্যমে কাটতে পারবেন।আর যদি অনলাইনে কাটেন তাহলে প্রথমে যে এয়ারলাইন্সের টিকেট কাটবেন তাদের ওয়েবসাইটে যান। Book Flight অপশন ক্লিক করুন। প্রথমে ওয়ান ওয়ে না রাউন্ড ট্রিপ তা সিলেক্ট করে কোথা থেকে কোথায় যাবেন তা নির্বাচন করুন, তারপর তারিখ নির্বাচন করুন। এবার এডাল্ট যাত্রির সংখ্যা, কোন বাচ্চা থাকলে দুই বছরের নিচে হলে ইনফ্যান্টস আর ২-১২ বছরের ভিতর হলে চিলড্রেন অপশন নির্বাচন করুন। এবার Show Flight ক্লিক করুন। আপনার নির্বাচিত তারিখের যে কয়টা শ্রেনির টিকেট এভাইলেবল আছে সবগুলো দেখাবে। আপনার মনপুত অপশন সিলেক্ট করে একাউন্ট করা থাকলে অগ ইন করুন অথবা গেস্ট হিসেবে বুক দিন।যাত্রির বিস্তারিত বর্ননা নাম,মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি তথ্য দিয়ে পুরণ করে বুক সম্পন্ন করুন। শুধুমাত্র বুকিং এর সময় অনলাইনে পাওয়া যায় ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত। এখন যদি বুকিং ফ্লাইট টি কনফার্ম করতে চান তাহলে অনলাইন পেমেন্ট অপশন এ ক্লিক করুন। এবার আপনি কার্ড/মোবাইল ব্যাংকিং দুইভাবেই পেমেন্ট দিতে পারবেন। এবার যেভাবে আপনার সুবিধা হয় পেমেন্ট করে টিকেট কনফার্ম করে নিন।


যেভাবে ভ্রমণ করবেন

আপনার নির্বাচিত তারিখে ফ্লাইটের নুন্যতম ১ ঘন্টা আগে এয়ারপোর্ট চলে যান। প্রথমে নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের কাউন্টার থেকে আপনার কাটা টিকেটের কপি দেখিয়ে বোডিং পাস নিয়ে ওয়েটিং রুমে বসুন। আর বড় কোন লাগেজ যেটা বক্সে দিতে চান বোডিং পাসের সাথেই বুঝিয়ে দিন। মনে রাখবেন একজন যাত্রি ২০ কেজির উপর মালামাল বহন করতে চাইলে প্রতি কেজির জন্য অতিরিক্ত চার্জ প্রদান করতে হবে। ওয়েটিং রুম থেকে এয়ারলান্সের নিজস্ব কার/বাসে করে আপনাকে বিমানের কাছে নিয়ে যাবে। বিমানবালা আপনার সিট বুঝিয়ে দিবেন। গন্তব্যে পৌছানোর পর একইভাবে নিজস্ব কার/বাসে করে ওয়েটিং রুমে নিয়ে যাবে। আর সমস্ত লাগেজগুলো বেলতের উপর একে একে ছাড়বে যার যার টা সে সে নিয়ে যাবে।


এয়ারলাইন্স সমুহের নাম ও ঠিকানা

আমাদের দেশে এখন বেশ কয়েকটি কোম্পানির এয়ারলাইন্স ডোমেস্টিক ফ্লাইট সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। নিচে তাদের নাম ও ঠিকানার তালিকা দেওয়া হলো।
বিমান বাংলাদেশ: ঢাকার এয়ারপোর্ট,কুর্মিটোলা,বনানি তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব অফিস রয়েছে। ফোন: ০২-৮৯০১৩০৬, ০২-৮৯০১৩৮৪, ০২-৯৮২২২৭২
নভো এয়ারলাইন্স: ঢাকার বনানি,গুলশান,উত্তরা,এয়ারপোর্ট, চট্রগ্রাম এর জিইসি মোর,ইজিজেড,বিমানবন্দর, কক্সবাজার কলাতলি, যশোর রেইল রোড, খুলনার সেনা কল্যান ভবন, সিলেটের জেইল রোড, বরিশাল এর আগ্রাপুর রোড,রাজশাহির ষ্টেশন রোড, সৈয়দপুরের নাজিম প্লাজায় নভো এয়াররে নিজস্ব অফিস রয়েছে। ফোন: ০৯৬৬৬৭২২২৪, ০১৭৫৫৬৫৬৬৬৩-৭২
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স: ঢাকার সহরোওয়ার্দি এভিনিউ,বারিধারা ডিপ্লোমাটিক জোনে ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্সের নিজস্ব অফিস রয়েছে। ফোন: ০২-৯৮৮৯২৩২,৯৮৪২৬০৮, ০১৭৭৭৭৭৭৭৮৮-৯০০
রিজেন্ট এয়ার: ঢাকার গুলশান,মতিঝিল, চিটাগাং এর আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ এবং কক্সবাজার এর কল্লোল পয়েন্টে রিজেন্ট এর নিজস্ব অফিস রয়েছে। ফোনঃ +৮৮০২-৫৫৬৬৯৯১১, +৮৮০-৯৬১২৬৬৯৯১১
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স: ঢাকার এয়ারপোর্ট, উত্তরা, গুলশান, কাওরান বাজার, মতিঝিল, চিটাগাং এর ইপিজেড,নাসিরাবাদ, আগ্রাবাদ, সিলেটের তুরঙ্গ, এয়ারপোর্ট,যশোর, কুড়িগ্রাম, ঈশ্বরদী, খুলনা, রাজশাহীতে ইউনাইটেড এয়ারের নিজস্ব অফিস রয়েছে। ফোন: ০২-৮৯৫৫৯৫৯, ০১৭১৩৪৮৬৬৬০, ০১৭১৩৪৮৬৬৬৪
বাংলাদেশে এই কয়টি এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ সার্ভিস বর্তমানে চালু আছে।

টিকেটের দরদাম

এয়ারলাইন্সের টিকেটের কয়েকটা ক্যাটাগরি রয়েছে। বিজনেস ক্লাস, ইকোনমি ক্লাস,রেগুলার, ক্লাসভেদে ফেয়ার রেট চেঞ্জ হয়ে থাকে। অল্প টাকায় টিকেট কাটতে বিভিন্ন অফাররের সময় অথবা যাত্রার বেশ কিছুদিন আগে টিকেট কাটতে হবে। বিশেষ করে বন্ধের দিন গুলোতে টিকেটের ফেয়ার এক্তু বেশি থাকে। তবে বেশিরভাগ সময় ই প্রমোশনাল/ ডিস্কাউন্ট অফার চলে। এই জন্য আগে ওয়েবসাইট চেক করে নিন। ভাড়ার একটি নুন্যতম তালিকা রেঞ্জ নিচে দেওয়া হলো।
ঢাকা-চট্রগ্রাম (ওয়ান ওয়ে)= ৩৫০০-৫৫০০ ঢাকা-কক্সবাজার (ওয়ান ওয়ে)=৪৩০০-৮০০০ ঢাকা-সিলেট (ওয়ান ওয়ে)= ৩২০০- ৫০০০ ঢাকা-বরিশাল (ওয়ান ওয়ে)= ৩২০০- ৫০০০ ঢাকা-খুলনা (ওয়ান ওয়ে)= ঢাকা-রাজশাহি (ওয়ান ওয়ে)= ৩২০০- ৫০০০ ঢাকা-সৈয়দপুর (ওয়ান ওয়ে)= ৩২০০- ৫০০০ ঢাকা-যশোর (ওয়ান ওয়ে)= ৩২০০- ৫০০০


ফ্লাইট শিডিউল

ঢাকা-চট্রগ্রাম (যাওয়া)= প্রতিদিন দুপুর সকাল ০৭ঃ৩০ থেকে সন্ধ্যা ০৮ঃ০০ পর্যন্ত। চট্রগ্রাম-ঢাকা (আসা)= প্রতিদিন সকাল ০৮ঃ৪০ থেকে রাত ০৯ঃ১০ পর্যন্ত।
ঢাকা-কক্সবাজার (যাওয়া)= প্রতিদিন দুপুর ১২ঃ৩০ থেকে দুপুর ০১ঃ৫০ পর্যন্ত। কক্সবাজার-ঢাকা (আসা)= প্রতিদিন দুপুর ০২ঃ৫০-০৩ঃ৩০ পর্যন্ত।
ঢাকা-সিলেট (যাওয়া)=প্রতিদিন দুপুর ১২ঃ০৫ সিলেট-ঢাকা (আসা)= প্রতিদিন দুপুর ০১ঃ০৫-০১ঃ৫০ পর্যন্ত।
ঢাকা-বরিশাল (যাওয়া)= সপ্তাহে সোম, মঙল, বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুপুর ০২ঃ১০। বরিশাল-ঢাকা (আসা)=সপ্তাহে সোম, মঙল, বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুপুর ০৩ঃ০০।
ঢাকা-রাজশাহি (যাওয়া)= সপ্তাহে শনি,সোম ও বুধবার দুপুর ০২ঃ১০। রাজশাহী-ঢাকা (আসা)= সপ্তাহে শনি,সোম ও বুধবার দুপুর ০৩ঃ১০।
ঢাকা-সৈয়দপুর (যাওয়া)= প্রতিদিন সকাল ১০ঃ৫০ ও বিকাল ০৫ঃ২০। সৈয়দপুর-ঢাকা (আসা)=প্রতিদিন সকাল ০৯ঃ৪০ ও বিকাল ০৪ঃ১০।
ঢাকা-যশোর (যাওয়া)= প্রতিদিন সকাল ০৭ঃ৪০ ও সন্ধ্যা ০৫ঃ৪০ যশোর-ঢাকা (আসা)= প্রতিদিন সকাল ০৮ঃ৪৫ ও সন্ধ্যা ০৬ঃ৪০।

বিঃদ্রঃ এখানে দেওয়া সময়গুলো যে কোন সময় পরিবর্তন হতে পারে। তাই প্রয়োজনে ১০০% নির্ভুল শিডিউল জানতে ওয়েবসাইট চেক করে নিন।

পরামর্শ

১। অবৈধ কিছু বহন করবেন না।
২। বিমান চলাকালিন সময়ে মোবাইল বন্ধ রাখুন।
৩। বছরের প্রথম দিকে বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সের অফারের খুব সিমিত টাকায় টিকেট কেনা যায়, তখন কিনে রাখুন।
৪। ভ্রমণের অন্তত ১ মাস আগে টিকেট কাটুন সাশ্রয়ি মুল্যে পাবেন।
৫। সবচেয়ে কম রেটের টিকেট ক্রয় করুন।
৬। সময়মত উপস্থিত থাকুন এয়ারপোর্টে, কারণ আপনার দেরির কারণে বিমান অপেক্ষা করবে না।
৭। যে কোন ধরণের দুর্যোগপুর্ন অবস্থায় অধৈর্য না হয়ে বিমানবালার নির্দেশনা মেনে চলুন।

বর্তমানে যে সকল এয়ারলাইন্সের সার্ভিস আমাদের দেশে চালু আছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো সার্ভিস দিচ্ছে এখন পর্যন্ত ইউএস বাংলা,নভো এয়ার এবং বিমান বাংলাদেশ। ইউনাইটেড এয়ার দেশের বহু পুরাতন বলেই তাদের বাহন গুলো অত্যাধিক পুরাতন হয়ে পড়েছে, যার ফলে তারা আর আগের মত সার্ভিস দিতে সক্ষম হচ্ছেনা। আমি একবার সিলেটে ভ্রমণে দেখলাম এসি থেকে গরম হাওয়া ছড়াচ্ছে, তাছাড়া সিট গুলো ও কমফোর্ট নয়। আর রিজেন্ট এয়ার মন্দের ভালো লেগেছে আমার কাছে। তাদের শিডিউল প্রায়ই নানা বাহানা দেখিয়ে লেট করে। একবার কক্সবাজারের দুপুর একটার ফ্লাইট মিথ্যে বাহানা দিয়ে বিকাল ৫:৩০ এ ছাড়ে। তুলনামুলক নভো এয়ার ও ইউএস বাংলা এয়ার বেশ ভালো এবং তাদের বিমান গুলো ও নতুন। আর বাংলাদেশ বিমানের সার্ভিস ও এখন ভালোই উন্নত হয়েছে। তাই আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ বিমানে ভ্রমণ করলে প্রথম পছন্দের তালিকায় রাখুন ইউএস বাংলা ও বিমান। এদের কম টাকায় ভালো সার্ভিস। আর দ্বিতিয় পছন্দের তালিকায় নভো এয়ার। সার্ভিস ও ভালো টিকেট ফেয়ার ও হাই লেভেলের। আর ইউনাইটেড এয়ার ও রিজেন্ট এয়ার পারত পক্ষে তাদের সার্ভিস না নেওয়াই ভালো মনে করি।

No comments