আইপিএল : জুয়ার আসর বন্ধ হোক
মাজের নানা অনিয়ম, অসংগতি, বিশৃঙ্খলা, সমস্যার সৃষ্টি হয় অপকর্মের মাধ্যমে। তেমনি একটি অপকাজ হচ্ছে জুয়া। জুয়া বলতে আমরা বুঝি টাকা দিয়ে যেকোনো একটি খেলার মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জন অথবা অপচয় করা। প্রতি বছর এ জুয়ার আসর বৃদ্ধি পায় আইপিএলে। আইপিএল বলতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। এটি খুব জনপ্রিয় একটি ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ। পৃথিবীর সব ক্রিকেটভক্ত এই খেলাগুলো দেখে। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের মানুষ এই লিগটি দারুণ উপভোগ করে, তবে সমস্যা হচ্ছে এই লিগ এলে জুয়ার আসরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন ছোট-বড় চায়ের দোকানে ভিড় জমে যায় জুয়াড়িদের।
এই অপকর্মের ফলে সমাজের নতুন প্রজন্মের বেড়ে ওঠাতে বড় একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে অভিভাবকদের। যেখানেই যাবেন এই জুয়া দেখতে পাবেন। অনেকে জুয়ায় তার টাকা সব হারিয়ে, নিজের ঘরের টাকা চুরি করে এনে আবার জুয়া খেলে। এটা একটা মারাত্মক ক্ষতিকর নেশা। এই নেশায় যারা একবার জড়িয়ে পড়ে, তারা আর ফিরে যেতে পারে না। বড়ই লোভনীয় একটি নেশা এটি। আমার কেন যেন মনে হয় আমাদের দেশে ক্রিকেটের ভক্তের চেয়ে ক্রিকেট নিয়ে জুয়া ধরার ভক্তকেই চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়তে দেখছি।
এই জুয়া শুধু যে আইপিএল এলেই হয় তা কিন্তু নয়। এটি আমাদের দেশে সচারচর দেখা যায়। কেউ ফুটবল বিশ্বকাপে, কেউ ক্রিকেটে, কেউ কার্ড খেলে, কেউ আবার পয়সা ঘুরিয়েও জুয়া খেলে। হরেক রকমভাবে জুয়া খেলার পন্থা থাকলেও মূলে কিন্তু টাকা। একজনের পকেটের টাকা অন্যজনের পকেটে চলে যাওয়া। আর এই নেশায় মগ্ন হয়ে অনেকে টাকার জন্য ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো বড় অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কেউ নিজের বাবার পকেট থেকে, কেউ মায়ের অলংকার, কেউ নিজের স্ত্রীর গহনা, কেউ বন্ধুর পকেটের টাকা চুরি করে হলেও জুয়ার আসরে যাবেই। আসলে এই জুয়ার মূলে হচ্ছে বেকারত্ব। বেকার ছেলেরাই এই নেশায় বেশি আসক্ত।
আজকাল দেখা যায়, শিক্ষিত স্কুল-কলেজের ছাত্ররাও এই জুয়ার নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন তদারকির। প্রশাসনের নজরদারি না থাকার কারণে এটি এখন খোলা রাস্তায় চলে এসেছে। যার কারণে অনেক শিক্ষিত ছেলেদেরও এই নেশায় চলে যেতে সময় লাগছে না। সামান্য লোভ থাকলেই এই নেশায় যাওয়া কোনো ব্যাপার না। কিন্তু সুযোগ পাওয়া হচ্ছে মূল বিষয়। যারা এই জুয়ার আসরে তৈরি করে দিচ্ছে আমাদের প্রয়োজন, তাদের সেই জুয়ার কারখানা ভেঙে দেওয়া। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে সন্তান কোথায় যায় এবং কেন যায়। লক্ষ রাখতে হবে সন্তান কত টাকা নিয়ে যায় বাসা থেকে এবং কত টাকা নিয়ে আসে। আমাদের মাঝে অনেক অভিভাবকই আছেন যারা সন্তানকে অল্প টাকা দেন তবে সন্তান দিন শেষে বেশি টাকা নিয়ে ঘরে ফিরে, তখন তারা সন্তানকে জিগ্যাস করেন না এত টাকা কোথা থেকে সে পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, অনেক অভিভাবকও লোভী এবং সন্তানের জোগানদাতা হয়ে উঠে এই নেশায়। তাই সন্তানের সুফল এবং মঙ্গল কামনা করলে কখনোই এই ধরনের বিষয়ে সন্তানদের সুযোগ না দেওয়াটাই ভালো।
আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, আগে আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়া জরুরি। তারপর আমরা আইন এবং প্রশাসনের সহযোগিতা পাব। প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি, প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, পৌরসভাসহ সব অলিগলিতে তল্লাশি চালিয়ে এই জুয়ার আসর বন্ধ করা হোক। এই জুয়ার আসর যদি আজ বন্ধ না হয়, তবে কাল অন্য একজন ছেলে সেই জুয়ার আসরে বসতে সুযোগ পাবে। এভাবে নষ্ট হয়ে পড়বে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। তাই প্রজন্মকে বাঁচাতে এবং দেশকে রক্ষা করতে হলে জুয়া নামক এই ভয়ানক খেলা থেকে বিরত রাখতে হবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের। আবারও বলছি, এই ভয়ানক নেশায় জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বেকারত্ব। তাই বেকারত্ব দূরীকরণে এ সমস্যার সমাধান অনেকটাই কমে আসবে। জুয়ার এই নেশা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজন অধিক পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। তবেই দেশে কোনো ধরনের নেশায় আর কোনো ছেলে নষ্ট হবে না।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
ayharmahmud705@gmail.com
ayharmahmud705@gmail.com
No comments