Breaking News

বাংলাদেশের ৪৭তম স্বাধীনতা দিবস ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু লিখতে হলে সবসময়ই আমাদের কিছু কিছু পুরনো ইতিহাস টানতে হয় কেননা, আমাদের স্বাধীনতাতো আর এমনি এমনি আসেনি। দীর্ঘ দিনের লড়াই সংগ্রাম, অনেক ত্যাগ, অনেক তিতিক্ষা, নয়মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ত্রিশলক্ষ শহিদের আত্মদান, দুইলক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। তাই এ নিবন্ধেও সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করার জন্য একটু পেছন ফিরে তাকাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস সঠিক ইতিহাস জানাতে হলে আমাদেরকে বার বার পেছনের ইতিহাসে ফিরে যেতে হবে, এটাই ইতিহাসের নিয়ম। ইতিহাসের শিক্ষা। 

ইতিহাসের সে শিক্ষা থেকেই কিছুটা পিছন ফিরে তাকাতে হচ্ছে। নবাব আলীবর্দী খাঁ প্রতিষ্ঠিত বাংলার স্বাধীন নবাবীর পতনকাল ১৭৫৭ সাল থেকে পরবর্তী প্রায় দুইশ’ বছরের ইতিহাস। এই সময়ের আগে থেকেই এই বাংলার মাটিতে পালাবদল ঘটেছে অনেক রাজা ও রাজবংশের। কিন্তু খ্রীষ্টপূর্ব ৩২১ অব্দে উদ্ভূত মৌর্য্য রাজবংশ থেকে পাকিস্তানের শাসনামল পর্যন্ত সবাই ছিল বিদেশী। গ্রীক লেখকগণের বর্ণনা মতে গঙ্গরিডাই বা গঙ্গারিড্ই নামে যে এক পরক্রমশালী জাতির উল্লেখ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকদের ধারণা মতে তারা বাংলাদেশের অধিবাসী ছিলেন। অন্যদিকে পুরাণ, মহাভারত ও পরবর্তী ব্রাক্ষাণ্য সাহিত্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতির যেসব উল্লেখ পাওয়া যায় তা থেকে অনুমিত হয় যে, প্রাচীন বাংলার আর্য প্রভাবমুক্ত কিছু খন্ড রাজ্যের উদ্ভব হয়েছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম থেকে ভারতবর্ষে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের সুযোগে বাংলায় বঙ্গ রাজ্য নামে একটি স্বাধীন সা¤্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ইতিহাসের সেই পথ ধরে ১৯৪৭ সালরে আগস্ট মাসে ব্রটিশি শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদশে স্বাধীন হয় এবং ভারত বভিক্ত হয়ে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্ররে জন্ম হয়। মুসলমি অধ্যুষতি এলাকা নিয়ে গঠতি হয় পাকস্তিান এবং হন্দিু ও অন্যান্য র্ধমাবলম্বী অধ্যুষতি অঞ্চল নিয়ে গঠতি হয় ভারত। নবগঠতি রাষ্ট্র পাকস্তিান দুই হাজার মাইলরে ব্যবধানে অবস্থতি দুটি প্রদশেরে সমন্বয়ে গঠতি হয়-র্পূব পাকস্তিান (অধুনা বাংলাদশে) ও পশ্চমি পাকস্তিান। 

পশ্চমি পাকস্তিানরে সাথে র্পূব পাকস্তিানরে বিপুল পরিমান র্অথনতৈকি বষৈম্য ছলি। মোট জাতীয় বাজটেরে সিংহভাগ বরাদ্দ থাকত পশ্চমি পাকস্তিানরে জন্য। পাকস্তিানরে মূল শাসক গোষ্ঠী ছলি পশ্চমি পাকস্তিানরে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চমিা শাসকরো র্পূব পাকস্তিানরে প্রতি বমিাতাসূলভ আচরণ করতে থাকে। র্পূব পাকস্তিান চরম র্অথনতৈকি বঞ্চনার শিকার হয়। এ কারণে র্পূব পাকস্তিানরে মানুষ পাকস্তিান সর্ম্পকে হতাশ হয়ে পড়ে এবং মানুষরে মনে ক্ষোভ দানা বাধতে শুরু করে। ভৌগোলকি ও সাংস্কৃতকি দকি দিয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে অবস্থতি এ দুটি অংশরে মধ্যে মলি ছলি কবেল সংখ্যাগরষ্ঠি মানুষরে ধর্মে।পাকস্তিানরে জন্মলগ্ন থকেইে এর র্পূব অংশ পশ্চমি অংশরে তুলনায় নানাভাবে বঞ্চতি হতে থাকে এবং স্বাধীন বাংলাদশেরে জন্মরে আগ র্পযন্ত র্দীঘ ২৩ বছর ছলি পশ্চমি পাকস্তিান র্কতৃক র্পূব পাকস্তিানকে শোষণ-বঞ্চনার ইতহিাস।

এই বৈষম্য ও ক্ষোভ থেকেই বাঙালিদের মনে স্বাধীনতার বীজ রোপীত হয়। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ একদিনে শুরু হয়নি। এই সংগ্রাম শুরু হয়েছিল পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই।  দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম এবং ২৩ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের ফসল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই সংগ্রামের বীজ ১৯৪৭ সালে অঙ্কুরিত হয়েছিল। তারপর ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন তথা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন তথা ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন এবং ৭০-এর নির্বাচন এর মাধ্যমে বাঙালিরা পাকিস্তানী শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিজয়ী হলেও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী নির্বাচনে বিজয়ী সংখ্যগড়িষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুবজবুর রহমান ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও পাকিস্তানী রাষ্ট্র শাসনের সুযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে ১৯৭১-এর মার্চ মাস থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক আন্দোলন। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত সর্বাত্তক অসহযোগ আন্দোলের মাধ্যমে শুরু হলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালিদের প্রকাশ্য বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহের মাধ্যমেই শুরু হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গঠনের চুড়ান্ত আন্দোলন। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন বিশ্বের ইতিহাসে একটি বিরল ও নজিরবিহীন ঘটনা। মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন করলেও তা সফল হয়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলন কেবল সফলই হয়নি; এ অসহযোগ আন্দোলনের সিড়ি বেয়েই বাঙালিরা স্বাধীনতা সংগ্রামের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছিল। 

বিশ্বের তাবৎ রাজনৈতিক আন্দোলন বা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পেশীশক্তি বা অস্ত্রের জোরে সমরনায়কদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ঘটনা ইতিহাসের পাতায় তেমন কোনো উল্লেখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়নি। বরং তা হয়েছে রাজনৈতিকভাবেও বিপ্লব, সশস্ত্র অভ্যুত্থান, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ইত্যাদির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে। বাস্তিল কারাগারের পতন ও ফরাসী বিপ্লব, রুশ বিপ্লব ও লেলিনের ক্ষমতায় অধিরোহণ, চীনে গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে মাও সে তুং-এর লং মার্চের মাধ্যমে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয়ক রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনের কথা শিক্ষিত সচেতন মানুষের অবিদিত নয়। কিন্তু‘ তবু বলতে হয়, বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন সারা দুনিয়ায় এক নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। কারণ এই আন্দোলন শুধু আমাদের সফল মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ও পটভূমিও তৈরি করেনি এবং সেই আন্দোলন কালেই কার্যত বাঙালীরা কয়েকদিনের জন্য হলেও পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা চালিয়েছিল। 

সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়, পূর্ব পাকিস্তানে যখন পাকিস্তানের শাসন কাঠামো ভেঙে পড়ে ঠিক ১৯৭১ সালে ২৫শে র্মাচ রাতে পাকস্তিান সামরকি বাহনিী শুরু করে অপারশেন র্সাচলাইট নামরে গণহত্যাযজ্ঞ। এশযি়া টাইমসরে ভাষ্য অনুযায়ী, সামরকি বাহনিীর বড় বড় অফসিারদরে নিয়ে বঠৈকে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করে "ত্রিশ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা কর, তখন দেখবে তারা আমাদরে হাত চেটে খাবে।" সে পরকিল্পনা মতোই ২৫শে র্মাচরে রাতে পাকস্তিানী র্আমি অপারশেন র্সাচলাইট আরম্ভ করে যার উদ্দশ্যে ছলি বাঙ্গালি প্রতরিোধ গুঁড়িয়ে দেয়া। এরই অংশ হসিাবে সামরকি বাহনিীর বাঙ্গালি সদস্যদরে নরিস্ত্র করে হত্যা করা হয়, ছাত্র ও বুদ্ধজিীবী সমাজ নধিন করা হয়। এবং সারা বাংলাদেশে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অপারেশন সার্টলাইট’ অভিযান শুরুর জন্য রাত সাড়ে ১১টায় ছাউনি থেকে বেরিয়ে আসে। ফার্মগেটের মুখে হানাদার বাহিনী প্রথম প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। এখানে তারা লাউড স্পিকারে গোটা ঢাকার কারফিউ জারির ঘোষণা দেয়। ছাত্র-জনতা সেনাবাহিনীকে বাঁধা দিলে তারা মেশিনগানের সাহায্যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে। ডিনামাইট দিয়ে ব্যারিকেড উড়িয়ে দিয়ে শহর প্রবেশ করে। রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় খন্ডযুদ্ধ। সেনাবাহিনী প্রতিরোধকারী বাঙালি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ট্যাংক-মর্টার-রকেট ব্যবহার করে। চারদিকে গুলি আর গোলার বিস্ফোরণ। মানুষের আর্তচিৎকার। মধ্যরাতেই সেনাবাহিনী পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে। সেনারা পিলখানাও নীলক্ষেতে প্রচ- প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। রাত ২টায় সময় হানাদার বাহিনী ট্যাংক, মেশিনগান, মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল করে। 

সেই কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হামলার পর আর এক লক্ষ্যস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এখানে আক্রমণ চালায় সম্পূর্ণ সামরিক কায়দায়। তাদের ধারণা ছিল তাদের প্রতিপক্ষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তারা প্রতিরোধের সম্মূখীন হবে। এই জন্য সমগ্র এলাকাটিকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ধরে নিয়ে পরিপূর্ণ যুদ্ধ প্রস্তুতির সাথে তারা অগ্রসর হয়। সারা রাত ধরে তারা মেশিনগান, মর্টার, ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য মারণাস্ত্র প্রয়োগ করে শেষে সার্জেন্ট জহিরুল হক হল, জগন্নাথ হল, সলিমুল্লাহ হল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের বাসভবনে প্রবেশ করে। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে জয় বাংলা’ তীব্র স্লোগান তুলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে এ দেশের সব মুক্তিকামী মানুষ অংশ নেয় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অগণিত মানুষ। যারা সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার সুযোগ পায়নি তারা মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে, বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছিল। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের উন্মত্ততার শিকার হয় দেশের অগণিত মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ। 

১৯৭১ সালের মার্চেই আমাদের বাঙালিদের জীবনে অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা অসহযোগ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কারণেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ পরাধীন বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার পথ দেখায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানানদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর সে ঘোষণা ইপিআর-এর ওয়্যারলেস এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দেশের আনাচে-কানাচে। সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু-ধ্বংস-আগুন আর আর্তনাদের পৈশাচিক বর্বরতা। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তান সৃষ্ট এক বিপন্নকাল। দীর্ঘ নয়মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিপন্নকালের সেই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করেই আমরা অবশেষে কাক্ষিত লক্ষ্যে ঠিকই পৌঁছেছিলাম। দেশের আকাশে উদিত হয় চিরভাস্বর স্বাধীনতার সূর্য। আমরা পাই একটি স্বাধীন সার্বভৌম মানচিত্র, বাংলার আকাশে উড়তে থাকে গৌরবময় লাল-সবুজের পতাকা। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের খুন করে জাতিকে মেধাশূন্য করে দিতে চেয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার মাত্র তিন বছর আট মাসের মাথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি চরম কলঙ্কজনক অধ্যায়। এরপর বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। যেসব যুদ্ধাপরাধী গা-ঢাকা দিয়ে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে গিয়েছিল তারা সব পুনর্বাসিত হয়েছে। বন্দুকের নলের মুখে বাংলাদেশের সংবিধান ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষের মনে এ ধারণা দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে যে, রাজাকার আলবদররাই এ দেশ স্বাধীন করেছিল। তা না হলে চিহ্নিত নামকরা যুদ্ধাপরাধীরা কিভাবে এ দেশের মন্ত্রিত্ব পায়? এই হলো আমাদের আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অতি ক্ষদ্র একটি চিত্র।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছরের এই ক্ষণে দাঁড়িয়ে আজ অনেকেই প্রশ্ন করেন, স্বাধীনতা লাভ করে আমরা কী পেলাম। যে লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, স্বাধীনতার ৪৬ বছরে এই সময়ে আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার প্রয়োজন যে আমরা কী করতে পেরেছি, কী পারিনি, মুক্তিযুদ্ধে এত আত্মদান ও ত্যাগ তিতিক্ষার পেছনে আমাদের যে স্বপ্ন ও লক্ষ্য ছিল, সেসব কতটা পূরণ হয়েছে, কতটা হয়নি! আমরা জানি যে, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িকতা। আমাদের মুক্তি সংগ্রামের মর্মকথা ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সব ধরনের অন্যায়-অবিচার, বৈষম্য থেকে মানুষের মুক্তি। স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে চার দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ এক নতুন যুগপর্বের সামনে দাঁড়িয়ে। আর এই নতুন যুগের সূচনা করছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কালে দেশটির অস্তিত্বের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল, মুক্তিসংগ্রামের পথে পথে কাঁটা বিছিয়েছিল- তাদের বিচারের দাবি স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে এ পর্যন্ত বহুবার বহুভাবে উচ্চারিত ও পুনরুচ্চারিত হয়েছে; কিন্তু বিচারের বাণী বরাবরই নিভৃতে কেঁদেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি, উল্টো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা বিএনপি-জাতীয় পার্টির সহযোগী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছে; যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে উড়েছে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজ পতাকা।  আবার আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০০৮-এর নির্বাচনী প্রচারে। আশার কথা, ক্ষমতাসীন হয়ে মহাজোট সরকার সর্বাগ্রে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে চলছে বিচার প্রক্রিয়া। কিন্তু তা আজো শেষ হয়নি। তাই আজ সারাদেশ অধীর আগ্রহে সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চূড়ান্ত রায় জানতে ও বাস্তবায়ন দেখতে সবাই  আগ্রহী। 

নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা সত্বেও দেশ আজ প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নতি সাধন করছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষণা অনুযায়ি ২০৪১ সালের মধ্যেই দেশ উন্নত দেশে উন্নিত হবে এটা দেশের মানুষ এখন মনে-প্রাণে বিশ্বাস করছে। স্বাধীনতা লাভের পর জাতীয় যে বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা সে বাজেট এখন এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকায়। খাদ্য ঘাটতির দেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে উন্নিত হয়ে দারীদ্রসীমা বিশ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি এখন প্রায় ৭.৫ শতাংশ। অর্থনীতির এমন কোনো খাত নেই যে সব খাতে বাংলাদেশ ঈর্শণীয় সাফল্য অর্জন করেনি। দেশের প্রতিটি গ্রামের দিকে তাকালেই দেখা যাবে দেশ এখন উন্নতির কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। তবে হতাশার কথা হলো, আমরা যতই এগিয়ে যাচ্ছি দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র মাথাচারা দিয়ে ওঠছে। পেছন থেকে টেনে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশের অগ্রগতির রাশ। দেশে একটি গোষ্ঠীর নেতিবাচক রাজনীতি এবং পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার অব্যাহত ষড়যন্ত্রে বর্তমানে জঙ্গিবাদ যেভাবে মাথাচারা দিয়ে ওঠছে, তাতে দেশবাসির মনে শঙ্কা দেখে দিয়েছে, দেশে না হয় বড় ধরনের কোন অঘটন ঘটে যায়। কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ওই অশুভ শক্তি তাদের দোসরা কিছুকেই বাংলাদেশের অগ্রগতি থামিয়ে দিতে পারবেনা। বাংলাদেশের মানুষ যে বীরের জাতি তা তারা বার বার প্রমাণ দিয়েছে, আগামীতেও দেবে। তাই ২০১৭ সালের স্বাধীনতা দিবসে অঙ্গিকার হোক সকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করবো। ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে শিখবো, স্বাধীনতার গৌরবময় চেতনাকে আমাদের অন্তরে লালন করবো। দেশের সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে পতাকার সম্মান অক্ষুন্ন রাখবো। কেননা স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে হলে সবার আগে প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা আর এই সচেতনতাবোধ ব্যক্তি ও রাষ্ট্র উভয়েরই আয়ত্ত্ব করতে হবে। 

সবশেষে বলতে চাই, জনগণের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমাদের জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে জনগণের ইস্পাত-কঠিন ঐক্য গড়ে। জনগণের মধ্যে বিভাজন জিইয়ে রেখে, এই বিভাজন আরো বাড়তে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। এ উপলব্ধি আমাদের মধ্যে যত বেশি করে আসবে ততই মঙ্গল। শুভ মঙ্গলের পথ হোক আমাদের সবার পথচলা। স্বাধীনতার ৪৭তম বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের সকলের প্রতিশ্রুতি ও দৃঢ় অঙ্গিকার।

No comments