বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক শক্তির পার্থক্য কতটা?
বাংলাদেশ সীমান্তে কিছুদিন আগে মিয়ানমার
সেনা সমাবেশ করার পর পতাকা বৈঠক করে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং ঐ
বৈঠকে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বলে মিয়ানমারকে। প্রতিবেশী
দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে এমন কোনো সম্ভাবনা কিংবা আশঙ্কা অবশ্য
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা দেখছেন না। দেশ দুটির সামরিক শক্তির একটি
পূর্ণাঙ্গ চিত্র আগে পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি বিশ্বের ১৩৩টি দেশের সামরিক
শক্তির যে তালিকা প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার, তাতে বাংলাদেশ ও
মিয়ানমারের শক্তির একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ানমারের তুলনায়
জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে থাকলেও সামরিক দিক থেকে পিছিয়ে
রয়েছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স ২০১৭ অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তিতে
মিয়ানমারের অবস্থান ৩১তম আর বাংলাদেশের অবস্থান ৫৭।
তবে তাদের এ তালিকায় শুধু সামরিক
লোকসংখ্যা, অস্ত্র, যানবাহনের মতো বিষয়ই বিবেচনায় আসেনি— এর সঙ্গে যোগ
হয়েছে জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান, শিল্প, কর্মক্ষমতার মতো নানা বিষয়ও।
সৈন্য সংখ্যা: এ ইনডেক্স অনুযায়ী,
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত মোট কর্মীর সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার,
অন্যদিকে মিয়ানমারের বাহিনীতে রয়েছে চার লাখ ছয় হাজার। বাংলাদেশের সংরক্ষিত
বাহিনীতে রয়েছে ৬৫ হাজার কর্মী, মিয়ানমারের রয়েছে এক লাখ ১০ হাজার।
প্রতিরক্ষা বাজেট: বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট যেখানে ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাজেট ২৪০ কোটি ডলার।
এয়ারক্রাফট:এ ইনডেক্স অনুযায়ী,
বাংলাদেশের মোট এয়ারক্রাফট রয়েছে ১৬৬টি আর মিয়ানমারের রয়েছে ২৪৯টি।
বাংলাদেশের যুদ্ধবিমান ৪৫টি আর মিয়ানমারের রয়েছে ৫৬টি। অ্যাটাক এয়ারক্রাফট
রয়েছে বাংলাদেশের ৪৫টি আর মিয়ানমারের ৭৭টি। বাংলাদেশের হেলিকপ্টার রয়েছে
৬১টি আর মিয়ানমারের রয়েছে ৮৬টি। বাংলাদেশের কোনো অ্যাটাক হেলিকপ্টার না
থাকলেও মিয়ানমারের রয়েছে ৯টি।
সামরিক যান:সূচকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের
সামরিক বাহিনীর মোট ট্যাংক রয়েছে ৫৩৪টি। অন্যদিকে মিয়ানমারের রয়েছে ৫৯২টি।
সাঁজোয়া যান বাংলাদেশের রয়েছে ৯৪২টি আর মিয়ানমারের রয়েছে ১৩৫৮টি।
আর্টিলারি:বাংলাদেশের রয়েছে ১৮টি
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি গান এবং ৩২টি রকেট প্রজেক্টর। মিয়ানমারের রয়েছে ১০৮টি
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি আর একই পরিমাণ রকেট প্রজেক্টর।
নৌযান:যেখানে মিয়ানমারের ন্যাভাল
অ্যাসেট রয়েছে ১৫৫টি, সেখানে বাংলাদেশের এমন সরঞ্জামের সংখ্যা ৮৯। দুই
দেশের কারোই বিমানবাহী রণতরী কিংবা ডেস্ট্রয়ার নেই। এই প্রতিবেদনে
বাংলাদেশের সাবমেরিন নেই লেখা হলেও কিছুদিন আগে অবশ্য বাংলাদেশ দুটি
সাবমেরিন কিনেছে। ফ্রিগেটের সংখ্যায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। মিয়ানমারের
পাঁচটি থাকলেও বাংলাদেশের রয়েছে ৬টি ফ্রিগেট। এ ছাড়া মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফট
এবং বাণিজ্যিক নৌযানের দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী,
সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে
রাশিয়া, চীন ও ভারত। শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে আরো রয়েছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য,
জাপান, তুরস্ক, জার্মানি আর মিশর। বিবিসি বাংলা।

No comments