তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে বাজেটে থাকছে ১শ’ কোটি টাকা
তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য দেশে ব্যবসার পরিবেশ যথেষ্ট অনুকূল নয়। তাই বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি বাজেটে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা জরুরি।এমন মত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে নতুন উদ্যোক্তা বিশেষ করে, তরুণ উদ্যোক্তার বিকল্প নেই।তাইতো সরকার দেশের ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করছে। আগামী বাজেটে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য তাদের ঋণ সহায়তা দেয়ার বিষয়টি রাখা হবে।এ লক্ষ্যে ‘স্টার্টআপ ফান্ড’ নামে ১০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করার প্রস্তাব করা হবে।
সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় উপকারভোগী প্রতিটি পরিবারের একজন সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে সরকার। এতে করে ওই পরিবারের সচ্ছলতা আসবে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে ব্যাপক সংস্কার হবে। নাগরিক সুবিধা মিলবে গ্রামেই। এছাড়া চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করাসহ শস্যবীমা চালু করার ঘোষণা আসবে। অর্থনীতির সবচেয়ে বড় শক্তি প্রবাসীদের রেমিটেন্সের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ও বীমা সুবিধা চালু করা হবে। এর বাইরেও আরও বেশকিছু চমক রয়েছে আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাকার অঙ্কে এবারও রেকর্ড সৃষ্টিকারী বাজেট প্রণয়ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামীকাল
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মহান সংসদে বাজেট পেশ করবেন। ইতোমধ্যে বাজেট পেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রতিটি বাজেটের আকার বাড়ছে। রেকর্ড অর্জনকারী প্রতিটির বাজেটের রেকর্ড ভাঙছে নতুন বাজেট। আসন্ন বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকারের চেয়ে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা বা ১৩ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, এটি হবে রেকর্ড সৃষ্টিকারী একটি চমকপ্রদ স্মার্ট বাজেট। বাজেটের সুবিধা দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। এই কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি গ্রামেই যাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করা হবে।
উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ফান্ড দেয়া হবে ॥ চাকরি নিব না, চাকরি দিব-শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে এ ধরনের একটি মনোভাব তৈরি করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। সবাই যাতে চাকরির পেছনে না ছুটে বরং আত্মকর্মসংস্থানে এগিয়ে আসে, সে লক্ষ্যে বাজেটে বিশেষ কর্মসূচী নেয়া হবে। দেশে এখন অনলাইনভিত্তিক হাজারও ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠছে। বাড়ছে কেনাকাটা। এক্ষেত্রে শিক্ষিত তরুণরা বেশ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া শিক্ষিত বেকার তরুণরা দেশের কৃষিক্ষেত্রেও অবদান রাখতে শুরু করেছে। গো-পালন, মৎস্যচাষ, ফলদ বাগানসহ নানাবিধ কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে যুবকরা। এ কারণে তরুণরা যাতে সহজে ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হতে পারেন, সেজন্য আলাদা একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হচ্ছে এবারের বাজেটে। এতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। যেসব যুবক ব্যবসা শুরু করতে চাইবেন, তাদের প্রাথমিক পুঁজি সরবরাহ করা হবে এই তহবিল থেকে। দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের জন্য সব সময় বরাদ্দ দেয়া হলেও বাজেটে তরুণদের জন্য সরাসরি সহায়তার এমন উদ্যোগ এবারই প্রথম। তবে প্রস্তাবিত ফান্ড কীভাবে পরিচালনা করা হবে, কত টাকা দেয়া হবে, ঋণ হিসেবে দেয়া হবে নাকি অনুদান দেয়া হবে-এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করার উদ্যোগ রয়েছে। ওই নীতিমালার ভিত্তিতে এই সহায়তা দেয়া হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হবে। অর্থাৎ কোন প্রবাসী ১০০ টাকা পাঠালে দেশে তিনি ১০২ টাকা পাবেন। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীদের জীবন বীমা সুবিধার আওতায় আনার ঘোষণা থাকছে আগামী বাজেটে। এর আওতায় বীমাকারী মৃত্যুবরণ করলে, দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী ও সম্পূর্ণ অক্ষমতা বা পঙ্গুত্ববরণ করলে মূল বীমার শতভাগ পরিশোধ করার বিধান রাখা হয়েছে। অন্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের ভিত্তিতে দাবি পরিশোধ করার কথাও থাকবে।
গ্রাম ও শহরের উন্নয়ন বৈষম্য কমিয়ে আনতে এবং গ্রামে শহরের সুবিধা নিশ্চিত করার দিকনির্দেশনা আসছে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট। গ্রামের মানুষকে জীবনের তাগিদে যেন শহরে ছুটতে না হয়, সেজন্য গ্রামবান্ধব কর্মসূচীতে বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার। চরম দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হচ্ছে। কৃষকের জন্য পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চালু করা হবে শস্যবীমা। প্রাথমিকভাবে বেছে নেয়া হবে একটি জেলাকে। পরবর্তী সময়ে এটি ছড়িয়ে দেয়া হবে সারাদেশে।
প্রসঙ্গত, আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার হচ্ছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা।
No comments