সহজেই ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব সিপিএ মার্কেটিংয়ে
ডিজিটাল মার্কেটিং দিয়ে শুরু করলেও তিনি এখন দেশের একজন অন্যতম সেরা অ্যাফিলিয়েট এবং সিপিএ মার্কেটার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড মার্কেটিংয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি ২০১১ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে তার পথ চলা শুরু। পড়াশুনা শেষে এটাকেই তিনি ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকান টি-শার্ট কোম্পানি গিয়ার লঞ্চ (Gear Launch)--এর কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও তিনি দেশীয় সিপিএ মার্কেট প্লেস ওয়ারিওর নিশ (Warrior niche)-এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। সিপিএ’র নানা বিষয় নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ছিলেন এই সিপিএ মার্কেটার। সাথে ছিলেন নুরুল ইসলাম।
ইনকিলাব : সিপিএ কী?
বেলাল উদ্দিন : সিপিএ (CPA)-এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হচ্ছে Cost Per Action বা Cost Per Acquisition। এটি এমন একটি মার্কেটিং পদ্ধতি যেখানে রেজিস্ট্রেশন, ই-মেইল সাবমিট, সার্ভে, পিন সাবমিট, ডাউনলোডসহ কিছু কাজের মাধ্যমে সেবা বা পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্ভাব্য ক্রেতার সংযোগ ঘটিয়ে মার্কেটাররা কমিশন পেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সেবা বা পণ্যের বিক্রয়ের পরবর্তী ধাপগুলো কোম্পানি নিজেই করে থাকে। ফলে প্রচলিত মার্কেটিং ব্যবস্থার থেকে ব্যতিক্রম অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের এই পদ্ধতিটি অনেক সহজ এবং এখান থেকে কয়েকগুণ বেশি আয় করাও সম্ভব। ধরুন কোন কোম্পানি নতুন একটি অ্যান্টি ভাইরাস বাজারে ছাড়লো এবং সাত দিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্যে বিনা মূল্যের একটি অফার দিল। সিপিএ মার্কেটারদের বলা হলো, প্রতিটি ফ্রি পরীক্ষামূলক ব্যবহারকারীর জন্য ২ ডলার করে দেয়া হবে। অর্থাৎ মার্কেটারকে দেয়া অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করে কেউ যখন ৭ দিনের জন্যে এন্টিভাইরাসটি ফ্রিতে ব্যবহার করে, তখন সেই মার্কেটার ২ ডলার কমিশন পায়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে ফ্রিতে ব্যবহার করতে দিয়ে এবং মার্কেটারদের কমিশন দিয়ে কোম্পানির কী লাভ? পণ্য বা সেবাদাতা কোম্পানি বিনামূল্যে ক্রেতাদের কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা দিয়ে থাকে, যাতে পরবর্তীতে টাকা দিয়ে পণ্য বা সেবা কিনতে উদ্বুদ্ধ হয়। এই পদ্ধতিটি সিপিএ মার্কেটারদের মত কোম্পানিগুলোর জন্যও লাভজনক। তারা স্বল্প খরচে তাদের সেবা ও পণ্যগুলো গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। এজন্য বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি তাদের পণ্য বা সেবার অফারগুলো সিপিএ মার্কেট প্লেসে দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী সেরা সিপিএ মার্কেট প্লেসগুলো হচ্ছে- ম্যাক্স বাউন্টি (MaxBounty), পিয়ার ফ্লাই (PeerFly), ক্লিক বুথ (Clickbooth), ক্লিক ডিলার (clickdealer), মুন্ডু মিডিয়া (Mundomedia), সিপিএ লিড (CPAlead), সিপিএ গ্রিপ (CPA grip), সিপিএ ফুল (CPAfull), এডওয়ার্ক মিডিয়া (AdWork Media)ইত্যাদি। এরমধ্যে সিপিএ গ্রিপ, সিপিএ ফুল নতুনদের জন্য ভালো। সবগুলো সিপিএ মার্কেট প্লেসগুলোতে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি প্রায় একই রকম। প্রথমে ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ইমেইল, লোকেশন / কান্ট্রি, জন্ম তারিখ ইত্যাদি) দিতে হবে, তারপর আবেদনকারীর ওয়েব সাইটের ঠিকানা, মার্কেটিং পদ্ধতি, ওই নেটওয়ার্কে কেন এবং কীভাবে কাজ করতে চান, কোন ট্রাফিক ম্যাথড ব্যবহার করছেন, কীভাবে তাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, অন্য কোন কোন নেটওয়ার্কে বর্তমানে কাজ করছেন কিনা এসব তথ্য চাওয়া হয়। অনেকেই অ্যাকাউন্ট পাবার জন্য মিথ্যা অথবা ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন, যা পরবর্তীতে ফোন/স্কাইপ ইন্টারভিউ (যদি নেয়) কিংবা অ্যাকাউন্ট রিভিউ করার সময় ধরা পরতে হয়। মার্কেট প্লেসগুলোতে নিজস্ব সাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেল ছাড়া অনুমোদন পাওয়া যায় না। তাই নিজেকে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করে এবং একটা সাইট তৈরি করে মার্কেট প্লেসগুলোতে আবেদন করা উচিত।
ইনকিলাব : কারা এই পেশায় ভালো করতে পারবে?
বেলাল উদ্দিন : যাদের মার্কেটিংয়ে কাজ করার প্রতি আগ্রহ আছে। আছে ধৈর্য। কারণ মার্কেটিংয়ে অল্পতে ধৈর্য হারালে সফল হওয়া সম্ভব নয়। আর সিপিএ মার্কেটিংয়ের পুরো কাজটাই যেহেতু করতে হয় আন্তর্জাতিক ক্লাইন্ট এবং ক্রেতাদের সাথে, সেহেতু ইংরেজিতে অবশ্যই পারদর্শী থাকতে হবে। ক্লাইন্ট এবং ক্রেতাদেরকে নিয়ে গবেষণা করার মানসিকতা থাকতে। সিপিএ মার্কেটিংয়ে এই শ্রেণির মানুষরাই ভালো করতে পারবে। আর যারা মার্কেটিংয়ে লেখাপড়া করছে বা করেছে তাদের জন্য কাজটা একটু সহজ হবে। তবে শেখার প্রতি প্রবল ইচ্ছে ও কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে শিক্ষিত যেকোন মানুষের পক্ষে এই সেক্টরে ভালো করা সম্ভব। কারণ মানুষ চেষ্টা করলে অনেক কিছুই পারে।
ইনকিলাব : নির্ভরযোগ্যতা ও স্থায়িত্বের বিচারে ক্যারিয়ার হিসেবে সিপিএ কেমন?
বেলাল উদ্দিন : রেকুটেন মার্কেটিং (Rakuten Marketing)এর এ বছরে করা এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯০% বিজ্ঞাপনদাতাদের মতে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বিশেষ করে সিপিএ তাদের সকল মার্কেটিং সফলতার অন্যতম মাধ্যম। বাৎসরিক ২০% রেভিনিউ তারা পায় সিপিএ মার্কেটারদের কাছ থেকে। ১৯৫ বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রির ৬.৮ বিলিয়ন ডলারই সিপিএ মার্কেটিংয়ের দখলে। বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের ১০% মার্কেটিং বাজেট অ্যাফিলিয়েট এবং সিপিএর জন্য বরাদ্দ রাখে। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, নির্ভরযোগ্যতা ও স্থায়িত্বের বিচারে ক্যারিয়ার হিসেবে সিপিএ অবশ্যই ভালো এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিপিএ মার্কেটিং অনেক সম্ভাবনাময়ী একটি পেশা। তবে সেটা করতে হবে সঠিক উপায়ে। অনেকেই না জেনে না বুঝে ভুল পদ্ধতিতে মার্কেটিং অফার প্রমোট করেন। যার কারণে অ্যাকাউন্ট হারাতে হয়। সিপিএতে সাধারাণত কোম্পানিগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে অফারগুলো দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে যে সকল মার্কেটার শর্ট কাট খুঁজে এবং বিভিন্ন জায়গায় লিঙ্ক শেয়ার করে বেড়ায় (স্পামিং) সে বিপদে পড়বে। কারণ অফার শেষ হবার সাথে সাথে ওই সব লিংক অকার্যকর হয়ে যাবে। তাই দীর্ঘমেয়াদি আয় পেতে মার্কেটারদের উচিত যে বিষয়ে কাজ করবে সে বিষয়ের উপর একটা ওয়েবসাইট খুলে সেখানে ওই বিষয়ের সুবিধাগুলো তুলে ধরে লেখার মধ্যে অ্যাফিলিয়েট লিংক দিয়ে দেয়া। যে লিংকটি দিবেন তার অফার যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে ওটা সরিয়ে ওই বিষয়ক অন্য অফারের লিংক যোগ করে দিবেন। এতে করে এখান থেকে আপনি স্থায়ী ইনকামের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
ইনকিলাব : আপনি কীভাবে সিপিএ’র কাজ শুরু করেন?
বেলাল উদ্দিন : ফিন্যান্স অ্যান্ড মার্কেটিংয়ে লেখাপড়ার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকেই ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করি। প্রথমে আমি ইল্যান্স (বর্তমানে আপওয়ার্ক) এ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করতাম। ২০১২ সালের শুরুর দিকে ফ্রান্সের একটি পারফিউম কোম্পানির জন্য এক ক্লাইন্ট আমাকে ভালো বাজেটের একটি কাজ দেয়। আমি তখন ভাবতে থাকি, এত বড় প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব মার্কেটার নেই? সব আমাকে দিয়ে কেন করাচ্ছে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলাম ক্লাইন্ট সরাসরি কোম্পানির কেউ না। তিনি একজন অ্যাফিলিয়েট মাত্র। এরপর আমি নিজেও ঐ কোম্পানিতে অ্যাফিলিয়েট/সিপিএ মার্কেটার হিসেবে আবেদন করি এবং অভিজ্ঞতা না থাকায় আমার আবেদনটি বাতিল করা হয়। এরপরে সিপিএর উপর পড়াশুনা শুরু করি। প্রয়োজনীয় শিক্ষা লাভের পর পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট তৈরি করে বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট এবং সিপিএ নেটওয়ার্কে আবেদন করি এবং কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে ঐ ক্লায়েন্টের সাথে আমার কোম্পানি টেক নাইন বেশ কিছু প্রজেক্ট পার্টনারশিপে করে। এভাবেই আসলে শুরু করা।
ইনকিলাব : এখানে খ-কালীন কাজের সুযোগ কতটুকু?
বেলাল উদ্দিন : সিপিএ মার্কেটিংয়ে কোন কাজের জন্য বিড করতে হয় না। এজন্য এখানে কাজ করা অনেক সহজ। এখানে বিভিন্ন ধরনের অফার আছে, যে যার মত অফার পছন্দ করে কাজ করতে পারে। তাই লেখাপড়া বা চাকরিসহ যেকোন পেশার পাশাপাশি সিপিএ করার সুযোগ আছে। তবে প্রথমে তাকে কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। সিপিএ মার্কেটিং এ দীর্ঘমেয়াদি অফারগুলো প্রমোট করাটা আমি বেশি ভালো মনে করি। তবে স্বল্পমেয়াদি অফার প্রমোট করে অল্প সময়ে বেশি আয় করা সম্ভব, কারণ তখন সে ধরনের অফারের চাহিদা থাকে। যদি উদাহরণ হিসেবে বলি আমেরিকান নির্বাচনের কিছু অফার ছিল যেগুলো বেশ ভালো চললেও নির্র্বাচন শেষ হবার সাথে সাথে অফারগুলো শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ইউএস ইলেকশন হওয়ার কারণে এটা নিয়ে কাজ করে মার্কেটাররা ভালো উপার্জন পেয়েছে।
ইনকিলাব : প্রতি মাসে এখান থেকে কত টাকা আয় করা যায়?
বেলাল উদ্দিন : সিপিএতে আয়ের কোন ধরাবাঁধা হিসেব আসলে দেয়া সম্ভব না। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে একজন মার্কেটারের মেধা, সময়, সৃজনশীলতা এবং যদি পেইড ট্রাফিকে কাজ করে, তবে তার বিনিয়োগের উপরে। যিনি কিছুই জানেন না, সে যদি নিয়মিত কয়েক মাস ৪/৫ ঘণ্টা করে শেখার পেছনে সময় দেন, তাহলে পরবর্তীতে মাসে ৫০০ ডলারের উপরে আয় করতে পারবেন বলে আশা করা যায়। সিপিএ মার্কেট প্লেসগুলো থেকে পেমেন্ট উত্তোলনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য পেওনিয়ার সব চেয়ে ভালো। আর বেশিরভাগ মার্কেট প্লেসে এখন পেওনিয়ার দিয়ে টাকা তোলা যায়। এছাড়া ওয়ার ট্রান্সফারের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা আনা যায়। তবে সেক্ষেত্রে অনেক বেশি চার্জ ও সময় লেগে যায়।
ইনকিলাব : এই সেক্টরের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কী কী?
বেলাল উদ্দিন : সঠিক প্রশিক্ষণ না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশি মার্কেটাররা কিছু ভুল পদ্ধতিতে (স্পামিং) কিছু ভুল অফার (স্ক্যামিং) প্রমোট করে থাকে, যার ফলে সাময়িকভাবে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া গেলেও পরবর্তীতে পেমেন্ট না পাওয়া, অ্যাকাউন্ট বাতিল হওয়াসহ নানা ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। কিছু ভালো নেটওয়ার্ক বাংলাদেশিদের অনুমোদন দেয়া কমিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ বাংলাদেশ থেকে রেজিস্ট্রেশনই করতে দেয় না। ইন্টারনেটের কম গতি এবং গ্রাহক পর্যায়ে অধিক মূল্যের কারণে সবার পক্ষে সিপিএতে আশা সম্ভব হয় না। এছাড়া সর্বজনীন সমস্যা কাজ শেষে টাকা উত্তোলনের মাধ্যম। অনেক নেটওয়ার্কে পেপাল ছাড়া আয়কৃত টাকা গ্রহণ করার কোন মাধ্যম থাকে না। এতে মার্কেটাররা বিপাকে পরে। আরেকটি সমস্যা হল মূলধনের অভাব। সিপিএতে পেইড মার্কেটিং করলে দ্রুত ভালো ফলাফল বা উপার্জন পাওয়া যায়। বিনিয়োগের সমস্যার কারণে অনেককে পিছিয়ে পড়তে হয়। যদিও ফ্রি ট্রাফিকে কাজ করেও অথরিটি বিল্ড আপ করার মাধ্যমে ভালো আয় করা যায়। সুবিধা হচ্ছে, এই সেক্টরের অন্যান্য কাজের তুলনায় এটা একটু সহজ। উপার্জনও ভালো। ইচ্ছা শক্তি ও কাজের প্রতি একাগ্রহতা থাকলে অতি দ্রুত সিপিএ মার্কেটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। তবে শুরুতে সময় একটু বেশিই দিতে হবে। যখন নিজের কাজ, নিজের টিম গুছিয়ে নিয়ে আসতে পারবে, তখন সময় কম দিলেই হয়। তবে নিয়মিত করতে হবে অবশ্যই। কাজ শুরু করে বন্ধ করে দেয়া বা প্রস্তুতি না নিয়ে কাজ শুরু করাটা একদমই ঠিক হবে না।
ইনকিলাব : নতুনরা কোথায় এবং কীভাবে সিপিএ শিখবে?
বেলাল উদ্দিন : সিপিএ মার্কেটিং শেখার সব চেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে অনলাইন। গুগল, ফেইসবুক, ইউটিউব, ব্লগ ইত্যাদি। ইন্টারন্যাশনাল অনেক বড় বড় ফোরাম, ফেইসবুক গ্রুপ, পেইজ আছে, যেগুলোতে সক্রিয় থাকলে নতুন আপডেট, মার্কেটিং পদ্ধতি, ট্রিকস এন্ড টিপস পাওয়া যায়। এছাড়াও দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান সিপিএ’র উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তবে সেগুলোতে প্রশিক্ষণ নেয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মানে তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। আর আমরা সম্প্রতি বাংলাদেশি মার্কেটারদের কথা চিন্তা করে ওয়ারিওর নিশ নামে একটি সিপিএ নেটওয়ার্ক চালু করি। যেখানে ওয়ারিওর নিশ একাডেমি নামে একটি অংশ রাখা হয়েছে, যেখানে একদম শুরু থেকে সিপিএ’র সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ সিপিএ মার্কেটিং শিখতে পারবে।
ইনকিলাব : আগ্রহীদের জন্য আপনার পরামর্শ।
বেলাল উদ্দিন : নতুনদের বলবো ভালোভাবে বুঝে শুনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এই পেশায় আসতে। স্পামিং / স্কামিং করে টিকে থাকা কষ্টকর। আমার মতে, একটি সফল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন নির্ভর করে গবেষণার উপর। নতুনরা গবেষণায় সময় না দিয়ে শুরুতে তাড়াহুড়া করে, তাই ভালো উপার্জন পায় না। নিজেকে সব সময় আপডেটেড রাখার জন্যে প্রতিদিন দিনের নির্দিষ্টি একটি সময় করে এ বিষয়ক সংবাদ, মার্কেটিং ফোরাম এবং ব্লগগুলো ঘাটাঘাটি করা উচিত। সৃষ্টিশীল মানসিকতা বিকাশের জন্যে বিশ্বে বড় বড় মার্কেটারদের মার্কেটিং পদ্ধতি, বিজ্ঞাপনের ডিজাইন, কনটেন্টগুলো নিয়মিত দেখতে হবে। সব মিলিয়ে সফল সিপিএ মার্কেটার হওয়ার জন্যে প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। তাছাড়া সিপিএতে প্রচুর অ্যাডালট/গ্যাম্বেলিং অফার থাকে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলো প্রমোট করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে ওসব অনৈতিক বিষয় ছাড়াই সিপিএ মার্কেটিংয়ে প্রচুর আয় করা সম্ভব। সবশেষে বলব, কাজটাকে ভালোবাসুন আর নিজের কাজে ভরসা রাখুন। সফলতা আসবেই, ইনশাআল্লাহ।
লিখেছেন: এস এম বেলাল উদ্দিন শুভ
সূত্র: ইনকিলাব
ইনকিলাব : সিপিএ কী?
বেলাল উদ্দিন : সিপিএ (CPA)-এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হচ্ছে Cost Per Action বা Cost Per Acquisition। এটি এমন একটি মার্কেটিং পদ্ধতি যেখানে রেজিস্ট্রেশন, ই-মেইল সাবমিট, সার্ভে, পিন সাবমিট, ডাউনলোডসহ কিছু কাজের মাধ্যমে সেবা বা পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্ভাব্য ক্রেতার সংযোগ ঘটিয়ে মার্কেটাররা কমিশন পেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সেবা বা পণ্যের বিক্রয়ের পরবর্তী ধাপগুলো কোম্পানি নিজেই করে থাকে। ফলে প্রচলিত মার্কেটিং ব্যবস্থার থেকে ব্যতিক্রম অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের এই পদ্ধতিটি অনেক সহজ এবং এখান থেকে কয়েকগুণ বেশি আয় করাও সম্ভব। ধরুন কোন কোম্পানি নতুন একটি অ্যান্টি ভাইরাস বাজারে ছাড়লো এবং সাত দিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্যে বিনা মূল্যের একটি অফার দিল। সিপিএ মার্কেটারদের বলা হলো, প্রতিটি ফ্রি পরীক্ষামূলক ব্যবহারকারীর জন্য ২ ডলার করে দেয়া হবে। অর্থাৎ মার্কেটারকে দেয়া অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করে কেউ যখন ৭ দিনের জন্যে এন্টিভাইরাসটি ফ্রিতে ব্যবহার করে, তখন সেই মার্কেটার ২ ডলার কমিশন পায়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে ফ্রিতে ব্যবহার করতে দিয়ে এবং মার্কেটারদের কমিশন দিয়ে কোম্পানির কী লাভ? পণ্য বা সেবাদাতা কোম্পানি বিনামূল্যে ক্রেতাদের কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা দিয়ে থাকে, যাতে পরবর্তীতে টাকা দিয়ে পণ্য বা সেবা কিনতে উদ্বুদ্ধ হয়। এই পদ্ধতিটি সিপিএ মার্কেটারদের মত কোম্পানিগুলোর জন্যও লাভজনক। তারা স্বল্প খরচে তাদের সেবা ও পণ্যগুলো গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। এজন্য বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি তাদের পণ্য বা সেবার অফারগুলো সিপিএ মার্কেট প্লেসে দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী সেরা সিপিএ মার্কেট প্লেসগুলো হচ্ছে- ম্যাক্স বাউন্টি (MaxBounty), পিয়ার ফ্লাই (PeerFly), ক্লিক বুথ (Clickbooth), ক্লিক ডিলার (clickdealer), মুন্ডু মিডিয়া (Mundomedia), সিপিএ লিড (CPAlead), সিপিএ গ্রিপ (CPA grip), সিপিএ ফুল (CPAfull), এডওয়ার্ক মিডিয়া (AdWork Media)ইত্যাদি। এরমধ্যে সিপিএ গ্রিপ, সিপিএ ফুল নতুনদের জন্য ভালো। সবগুলো সিপিএ মার্কেট প্লেসগুলোতে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি প্রায় একই রকম। প্রথমে ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ইমেইল, লোকেশন / কান্ট্রি, জন্ম তারিখ ইত্যাদি) দিতে হবে, তারপর আবেদনকারীর ওয়েব সাইটের ঠিকানা, মার্কেটিং পদ্ধতি, ওই নেটওয়ার্কে কেন এবং কীভাবে কাজ করতে চান, কোন ট্রাফিক ম্যাথড ব্যবহার করছেন, কীভাবে তাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, অন্য কোন কোন নেটওয়ার্কে বর্তমানে কাজ করছেন কিনা এসব তথ্য চাওয়া হয়। অনেকেই অ্যাকাউন্ট পাবার জন্য মিথ্যা অথবা ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন, যা পরবর্তীতে ফোন/স্কাইপ ইন্টারভিউ (যদি নেয়) কিংবা অ্যাকাউন্ট রিভিউ করার সময় ধরা পরতে হয়। মার্কেট প্লেসগুলোতে নিজস্ব সাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেল ছাড়া অনুমোদন পাওয়া যায় না। তাই নিজেকে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করে এবং একটা সাইট তৈরি করে মার্কেট প্লেসগুলোতে আবেদন করা উচিত।
ইনকিলাব : কারা এই পেশায় ভালো করতে পারবে?
বেলাল উদ্দিন : যাদের মার্কেটিংয়ে কাজ করার প্রতি আগ্রহ আছে। আছে ধৈর্য। কারণ মার্কেটিংয়ে অল্পতে ধৈর্য হারালে সফল হওয়া সম্ভব নয়। আর সিপিএ মার্কেটিংয়ের পুরো কাজটাই যেহেতু করতে হয় আন্তর্জাতিক ক্লাইন্ট এবং ক্রেতাদের সাথে, সেহেতু ইংরেজিতে অবশ্যই পারদর্শী থাকতে হবে। ক্লাইন্ট এবং ক্রেতাদেরকে নিয়ে গবেষণা করার মানসিকতা থাকতে। সিপিএ মার্কেটিংয়ে এই শ্রেণির মানুষরাই ভালো করতে পারবে। আর যারা মার্কেটিংয়ে লেখাপড়া করছে বা করেছে তাদের জন্য কাজটা একটু সহজ হবে। তবে শেখার প্রতি প্রবল ইচ্ছে ও কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে শিক্ষিত যেকোন মানুষের পক্ষে এই সেক্টরে ভালো করা সম্ভব। কারণ মানুষ চেষ্টা করলে অনেক কিছুই পারে।
ইনকিলাব : নির্ভরযোগ্যতা ও স্থায়িত্বের বিচারে ক্যারিয়ার হিসেবে সিপিএ কেমন?
বেলাল উদ্দিন : রেকুটেন মার্কেটিং (Rakuten Marketing)এর এ বছরে করা এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯০% বিজ্ঞাপনদাতাদের মতে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বিশেষ করে সিপিএ তাদের সকল মার্কেটিং সফলতার অন্যতম মাধ্যম। বাৎসরিক ২০% রেভিনিউ তারা পায় সিপিএ মার্কেটারদের কাছ থেকে। ১৯৫ বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রির ৬.৮ বিলিয়ন ডলারই সিপিএ মার্কেটিংয়ের দখলে। বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের ১০% মার্কেটিং বাজেট অ্যাফিলিয়েট এবং সিপিএর জন্য বরাদ্দ রাখে। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, নির্ভরযোগ্যতা ও স্থায়িত্বের বিচারে ক্যারিয়ার হিসেবে সিপিএ অবশ্যই ভালো এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিপিএ মার্কেটিং অনেক সম্ভাবনাময়ী একটি পেশা। তবে সেটা করতে হবে সঠিক উপায়ে। অনেকেই না জেনে না বুঝে ভুল পদ্ধতিতে মার্কেটিং অফার প্রমোট করেন। যার কারণে অ্যাকাউন্ট হারাতে হয়। সিপিএতে সাধারাণত কোম্পানিগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে অফারগুলো দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে যে সকল মার্কেটার শর্ট কাট খুঁজে এবং বিভিন্ন জায়গায় লিঙ্ক শেয়ার করে বেড়ায় (স্পামিং) সে বিপদে পড়বে। কারণ অফার শেষ হবার সাথে সাথে ওই সব লিংক অকার্যকর হয়ে যাবে। তাই দীর্ঘমেয়াদি আয় পেতে মার্কেটারদের উচিত যে বিষয়ে কাজ করবে সে বিষয়ের উপর একটা ওয়েবসাইট খুলে সেখানে ওই বিষয়ের সুবিধাগুলো তুলে ধরে লেখার মধ্যে অ্যাফিলিয়েট লিংক দিয়ে দেয়া। যে লিংকটি দিবেন তার অফার যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে ওটা সরিয়ে ওই বিষয়ক অন্য অফারের লিংক যোগ করে দিবেন। এতে করে এখান থেকে আপনি স্থায়ী ইনকামের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
ইনকিলাব : আপনি কীভাবে সিপিএ’র কাজ শুরু করেন?
বেলাল উদ্দিন : ফিন্যান্স অ্যান্ড মার্কেটিংয়ে লেখাপড়ার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকেই ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করি। প্রথমে আমি ইল্যান্স (বর্তমানে আপওয়ার্ক) এ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করতাম। ২০১২ সালের শুরুর দিকে ফ্রান্সের একটি পারফিউম কোম্পানির জন্য এক ক্লাইন্ট আমাকে ভালো বাজেটের একটি কাজ দেয়। আমি তখন ভাবতে থাকি, এত বড় প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব মার্কেটার নেই? সব আমাকে দিয়ে কেন করাচ্ছে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলাম ক্লাইন্ট সরাসরি কোম্পানির কেউ না। তিনি একজন অ্যাফিলিয়েট মাত্র। এরপর আমি নিজেও ঐ কোম্পানিতে অ্যাফিলিয়েট/সিপিএ মার্কেটার হিসেবে আবেদন করি এবং অভিজ্ঞতা না থাকায় আমার আবেদনটি বাতিল করা হয়। এরপরে সিপিএর উপর পড়াশুনা শুরু করি। প্রয়োজনীয় শিক্ষা লাভের পর পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট তৈরি করে বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট এবং সিপিএ নেটওয়ার্কে আবেদন করি এবং কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে ঐ ক্লায়েন্টের সাথে আমার কোম্পানি টেক নাইন বেশ কিছু প্রজেক্ট পার্টনারশিপে করে। এভাবেই আসলে শুরু করা।
ইনকিলাব : এখানে খ-কালীন কাজের সুযোগ কতটুকু?
বেলাল উদ্দিন : সিপিএ মার্কেটিংয়ে কোন কাজের জন্য বিড করতে হয় না। এজন্য এখানে কাজ করা অনেক সহজ। এখানে বিভিন্ন ধরনের অফার আছে, যে যার মত অফার পছন্দ করে কাজ করতে পারে। তাই লেখাপড়া বা চাকরিসহ যেকোন পেশার পাশাপাশি সিপিএ করার সুযোগ আছে। তবে প্রথমে তাকে কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। সিপিএ মার্কেটিং এ দীর্ঘমেয়াদি অফারগুলো প্রমোট করাটা আমি বেশি ভালো মনে করি। তবে স্বল্পমেয়াদি অফার প্রমোট করে অল্প সময়ে বেশি আয় করা সম্ভব, কারণ তখন সে ধরনের অফারের চাহিদা থাকে। যদি উদাহরণ হিসেবে বলি আমেরিকান নির্বাচনের কিছু অফার ছিল যেগুলো বেশ ভালো চললেও নির্র্বাচন শেষ হবার সাথে সাথে অফারগুলো শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ইউএস ইলেকশন হওয়ার কারণে এটা নিয়ে কাজ করে মার্কেটাররা ভালো উপার্জন পেয়েছে।
ইনকিলাব : প্রতি মাসে এখান থেকে কত টাকা আয় করা যায়?
বেলাল উদ্দিন : সিপিএতে আয়ের কোন ধরাবাঁধা হিসেব আসলে দেয়া সম্ভব না। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে একজন মার্কেটারের মেধা, সময়, সৃজনশীলতা এবং যদি পেইড ট্রাফিকে কাজ করে, তবে তার বিনিয়োগের উপরে। যিনি কিছুই জানেন না, সে যদি নিয়মিত কয়েক মাস ৪/৫ ঘণ্টা করে শেখার পেছনে সময় দেন, তাহলে পরবর্তীতে মাসে ৫০০ ডলারের উপরে আয় করতে পারবেন বলে আশা করা যায়। সিপিএ মার্কেট প্লেসগুলো থেকে পেমেন্ট উত্তোলনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য পেওনিয়ার সব চেয়ে ভালো। আর বেশিরভাগ মার্কেট প্লেসে এখন পেওনিয়ার দিয়ে টাকা তোলা যায়। এছাড়া ওয়ার ট্রান্সফারের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা আনা যায়। তবে সেক্ষেত্রে অনেক বেশি চার্জ ও সময় লেগে যায়।
ইনকিলাব : এই সেক্টরের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কী কী?
বেলাল উদ্দিন : সঠিক প্রশিক্ষণ না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশি মার্কেটাররা কিছু ভুল পদ্ধতিতে (স্পামিং) কিছু ভুল অফার (স্ক্যামিং) প্রমোট করে থাকে, যার ফলে সাময়িকভাবে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া গেলেও পরবর্তীতে পেমেন্ট না পাওয়া, অ্যাকাউন্ট বাতিল হওয়াসহ নানা ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। কিছু ভালো নেটওয়ার্ক বাংলাদেশিদের অনুমোদন দেয়া কমিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ বাংলাদেশ থেকে রেজিস্ট্রেশনই করতে দেয় না। ইন্টারনেটের কম গতি এবং গ্রাহক পর্যায়ে অধিক মূল্যের কারণে সবার পক্ষে সিপিএতে আশা সম্ভব হয় না। এছাড়া সর্বজনীন সমস্যা কাজ শেষে টাকা উত্তোলনের মাধ্যম। অনেক নেটওয়ার্কে পেপাল ছাড়া আয়কৃত টাকা গ্রহণ করার কোন মাধ্যম থাকে না। এতে মার্কেটাররা বিপাকে পরে। আরেকটি সমস্যা হল মূলধনের অভাব। সিপিএতে পেইড মার্কেটিং করলে দ্রুত ভালো ফলাফল বা উপার্জন পাওয়া যায়। বিনিয়োগের সমস্যার কারণে অনেককে পিছিয়ে পড়তে হয়। যদিও ফ্রি ট্রাফিকে কাজ করেও অথরিটি বিল্ড আপ করার মাধ্যমে ভালো আয় করা যায়। সুবিধা হচ্ছে, এই সেক্টরের অন্যান্য কাজের তুলনায় এটা একটু সহজ। উপার্জনও ভালো। ইচ্ছা শক্তি ও কাজের প্রতি একাগ্রহতা থাকলে অতি দ্রুত সিপিএ মার্কেটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। তবে শুরুতে সময় একটু বেশিই দিতে হবে। যখন নিজের কাজ, নিজের টিম গুছিয়ে নিয়ে আসতে পারবে, তখন সময় কম দিলেই হয়। তবে নিয়মিত করতে হবে অবশ্যই। কাজ শুরু করে বন্ধ করে দেয়া বা প্রস্তুতি না নিয়ে কাজ শুরু করাটা একদমই ঠিক হবে না।
ইনকিলাব : নতুনরা কোথায় এবং কীভাবে সিপিএ শিখবে?
বেলাল উদ্দিন : সিপিএ মার্কেটিং শেখার সব চেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে অনলাইন। গুগল, ফেইসবুক, ইউটিউব, ব্লগ ইত্যাদি। ইন্টারন্যাশনাল অনেক বড় বড় ফোরাম, ফেইসবুক গ্রুপ, পেইজ আছে, যেগুলোতে সক্রিয় থাকলে নতুন আপডেট, মার্কেটিং পদ্ধতি, ট্রিকস এন্ড টিপস পাওয়া যায়। এছাড়াও দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান সিপিএ’র উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তবে সেগুলোতে প্রশিক্ষণ নেয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মানে তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। আর আমরা সম্প্রতি বাংলাদেশি মার্কেটারদের কথা চিন্তা করে ওয়ারিওর নিশ নামে একটি সিপিএ নেটওয়ার্ক চালু করি। যেখানে ওয়ারিওর নিশ একাডেমি নামে একটি অংশ রাখা হয়েছে, যেখানে একদম শুরু থেকে সিপিএ’র সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ সিপিএ মার্কেটিং শিখতে পারবে।
ইনকিলাব : আগ্রহীদের জন্য আপনার পরামর্শ।
বেলাল উদ্দিন : নতুনদের বলবো ভালোভাবে বুঝে শুনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এই পেশায় আসতে। স্পামিং / স্কামিং করে টিকে থাকা কষ্টকর। আমার মতে, একটি সফল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন নির্ভর করে গবেষণার উপর। নতুনরা গবেষণায় সময় না দিয়ে শুরুতে তাড়াহুড়া করে, তাই ভালো উপার্জন পায় না। নিজেকে সব সময় আপডেটেড রাখার জন্যে প্রতিদিন দিনের নির্দিষ্টি একটি সময় করে এ বিষয়ক সংবাদ, মার্কেটিং ফোরাম এবং ব্লগগুলো ঘাটাঘাটি করা উচিত। সৃষ্টিশীল মানসিকতা বিকাশের জন্যে বিশ্বে বড় বড় মার্কেটারদের মার্কেটিং পদ্ধতি, বিজ্ঞাপনের ডিজাইন, কনটেন্টগুলো নিয়মিত দেখতে হবে। সব মিলিয়ে সফল সিপিএ মার্কেটার হওয়ার জন্যে প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। তাছাড়া সিপিএতে প্রচুর অ্যাডালট/গ্যাম্বেলিং অফার থাকে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলো প্রমোট করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে ওসব অনৈতিক বিষয় ছাড়াই সিপিএ মার্কেটিংয়ে প্রচুর আয় করা সম্ভব। সবশেষে বলব, কাজটাকে ভালোবাসুন আর নিজের কাজে ভরসা রাখুন। সফলতা আসবেই, ইনশাআল্লাহ।
লিখেছেন: এস এম বেলাল উদ্দিন শুভ
সূত্র: ইনকিলাব
No comments