আমি দেখেছি যারা আইন সম্পর্কে সামান্য হলেও জানে তারা আইন মেনে চলার চেষ্টা
করে। জাতীয় পতাকার ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। সবার ধারণা যে কোনো জাতীয়
দিবসে পতাকা উত্তোলন করা যায়, কিন্তু কোন কোন দিবসে কিভাবে পতাকা উত্তোলনের
নিয়ম রয়েছে তা অনেকেই জানেন না। আবার যারা পতাকা বানায় তারাও কি জানে আইনে
পতাকার আকার ও রঙের ব্যাপারে কি বলা হয়েছে? অনেকেই জানেন না। পতাকা যারা
বানায় এবং যারা ব্যবহার করে তাদের সচেতন করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার সচেতন
করতে পারছে না বলেই জাতীয় পতাকা অবমাননা হচ্ছে। জাতীয় পতাকার
প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।১৬ ডিসেম্বর,
২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারির মতো দিনগুলোতে বাসাবাড়ি, গাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায়
অনেকে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করে থাকেন।ইদানীং ফ্যাশন হাউসগুলো জাতীয় পতাকা
সংবলিত টি-শার্ট, শাড়ি, ফ্রক, কামিজ, ওড়না, মাথার স্কার্ফ তৈরি করছে। জাতীয়
পতাকার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা বা জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান
প্রদর্শন না করলে ওই ব্যক্তিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। জাতীয় পতাকার
অবমাননা করার অর্থ হচ্ছে যুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা। আবেগের বসে জাতীয়
পতাকা ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক কষ্টে অর্জিত এ পতাকার প্রতি যদি অবমূল্যায়ন
করা হয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা কষ্ট পাবে।
বাংলাদেশ পতাকা
রুলস, ১৯৭২-এর ৪ ধারায় কোন কোন দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে সে
সম্পর্কে বলা হয়েছে।বাংলাদেশের ভেতরে ও বাহিরে সরকারি-বেসরকারি ভবনে এবং
বাংলাদেশ সরকারের ডিপ্লোম্যাটিক মিশনে ও হাইকমিশনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ
(স.)-এর জন্ম দিনে (ঈদে মিলাদুন্নবী), ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে, ১৬
ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে। এ ছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি
ভাষা দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হবে।জাতীয় পতাকার যত্রতত্র ও যথেচ্ছ
ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের একটা নিয়ম আছে। কিন্তু সে
নিয়ম সব সময় মানা হচ্ছে বলে মনে হয় না। জাতীয় পতাকা সর্বত্র প্রদর্শন করা
যায় না। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও দপ্তর, যেমন রাষ্ট্রপতি ভবন,
প্রধানমন্ত্রী ভবন, জাতীয় সংসদ ভবন ইত্যাদিতে কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা
উত্তোলিত হবে এটাই নিয়ম।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে, নৌ
যানে ও বিমানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবে। এ ছাড়া স্পিকার, প্রধান
বিচারপতি, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের
নেতা, মন্ত্রী সমমর্যাদার ব্যক্তি, বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের প্রধানের
গাড়িতে ও তাদের নৌ যানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রী,
প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, উপমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর
মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজধানীর বাইরে ভ্রমণকালে গাড়িতে ও নৌ যানে জাতীয়
পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন।১৯৭২-এর ৩ ধারায় জাতীয় পতাকা কেমন মাপের ও রঙের
হবে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে।
শহীদ দিবস ও জাতীয় শোক দিবসে বা সরকার
প্রজ্ঞাপিত অন্যান্য দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকার বিধান করা হয়েছে।
অর্ধনমিত রাখতে হলে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম হলো, অর্ধনমিত অবস্থায় উত্তোলনের
প্রাক্কালে পতাকাটি পুরোপুরি উত্তোলন করে অর্ধনমিত অবস্থানে আনতে হবে এবং
পতাকা নামানোর প্রাক্কালে পতাকাটি শীর্ষে উত্তোলন করে নামাতে হবে।ইচ্ছে
করলেই যে কেউ গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারে না। কেননা আইনে বলা হয়েছে,
কোনো অবস্থায়ই গাড়ি কিংবা কোনো যান, রেল কিংবা নৌকার খোলে, ওপরিভাগে বা
পেছনে পতাকা ওড়ানো যাবে না। বাংলাদেশের পতাকার ওপরে অন্য কোনো
পতাকা বা রঙিন পতাকা ওড়ানো যাবে না। মিছিলে পতাকা বহনের বিধান হচ্ছে, পতাকা
মিছিলের কেন্দ্রে অথবা মিছিলের অগ্রগমন পথের ডান দিকে বহন করতে হবে।
অনেকেই জাতীয় পতাকায় নকশা করে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু জাতীয়
পতাকার ওপর কোনো কিছু লেখা বা মুদ্রিত করা যাবে না অথবা কোনো অনুষ্ঠান বা
উপলক্ষে কোনো চিহ্ন অঙ্কন করা যাবে না; এমনকি জাতীয় পতাকাকে পোশাক হিসেবে
ব্যবহার করা যাবে না এবং গায়ে জড়িয়ে রাখা যাবে না। আমরা যদি জাতীয়
পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে না পারি তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা
শান্তি পাবে না। অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন
করেছেন।জাতীয় পতাকার মাপ হবে ১০: ৬ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের আয়তাকার ক্ষেত্রের
গাঢ় সবুজ রঙের মাঝে লাল বৃত্ত এবং বৃত্তটি দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ
ব্যসার্ধবিশিষ্ট হবে। জাতীয় পতাকা শুধু একটি কাপড় নয়, এটি দেশের স্বাধীনতার
প্রতীক।
জাতীয় সংগীত কখন কোথায় পরিবেশন হবে_তারও একটা নিয়ম আছে।
স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবসে সম্পূর্ণ জাতীয় সংগীত পরিবেশনের
নিয়ম রয়েছে। আবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যেসব অনুষ্ঠানে থাকবেন, সেসব
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের নিয়ম আছে। আবার জাতীয় সংগীত আংশিক
পরিবেশনেরও নিয়ম আছে। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই জাতীয় সংগীত বিকৃত করা যাবে না।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় সম্মান প্রদর্শনের অনুমোদিত বিধি রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্য স্থানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের নিয়ম আছে। আর
জাতীয় প্রতীক তো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতীক।
আমাদের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়ম এবং আইন
Reviewed by Razu Mondal
on
January 02, 2018
Rating: 5
No comments