Breaking News

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর...

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরে ভারতের সাথে ৭ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এবং ৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। এরপরই কিছু #চরম_বুঝ_মানুষ শুরু করে দেয়, সরকার ভারতকে সব দিয়ে আসছে এমনকি ফেনী নদীর পানি এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসও! কেউ কেউ তো হিসেব কষে বলেই দিলো যে ফেনী নদী হতে ১.৮২ কিউসেক পানি দিলে বছরে ১৬০ কোটি লিটার পানি ভারত নিয়ে যাবে এবং এতে বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলাকে নিজ হাতে খুন করলো সরকার!
অনেক দেশপ্রেমিক মানুষ লাইন দিলো গুজবের সেই বয়ানে।
আসুন, এবার একটু তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কথা বলি:
১) শুকনো মৌসুমে ফেনী নদীর পানির গড় পরিমাণ ৭৯৪ কিউসেক এবং বাৎসরিক পানির গড় পরিমাণ প্রায় ১,৮৭৮ কিউসেক। তাহলে ১.৮২ কিউসেক পানি শুষ্ক মৌসুমের গড় পানি প্রবাহের মাত্র ০.২২৯ শতাংশ। বাৎসরিক গড় হিসেব বাদ দিলাম!
এছাড়াও নদী নিয়ে গবেষণা করেন এরকম ব্যক্তি ও সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ বলছেন, ১.৮২ কিউসেক পানি ভারত তার জনগণের খাবার পানীয় সংকট মেটাতে তুলে নিলেও তা পরিবেশের ওপর তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। আমাদের মুহুরি সেচ প্রকল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তাহলে সমালোচকদের এই সফর ও চুক্তি নিয়ে সমালোচনার ভিত্তি কি? নাকি কারবালার প্রান্তরে যেভাবে পানির অভাবে মুসলিমরা মারা পড়েছিল সেই ঘটনাও আমাদের শিক্ষা দিতে পারেনি?
২) বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস নয় বরং তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি রপ্তানি করবে। নি:সন্দেহে এটা বাংলাদেশের জন্য ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক হবে। যদিওবা কেউ কেউ আবার বলছে এতে আমদানিতে আমাদের যে খরচ, রপ্তানী করা হচ্ছে তার চাইতে কম খরচে। হাস্যকর কিন্তু উস্কানিমূলক একটি তথ্য। কারণ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ তার নিজস্ব চাহিদা মিটিয়েই ত্রিপুরায় এলপিজি রপ্তানি করবে এবং সেজন্য বাংলাদেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভারতের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি করে এই রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিশ্চয় লোকসান দিয়ে ভারতে এলপিজি রপ্তানি করবে না?
এটা কি সরকারের সফলতা নয়?
৩) তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে এক ধরণের হুজুগে প্রচার লক্ষণীয়। কিন্তু এর সাথে কতগুলো পক্ষ ও ফ্যাক্টর জড়িত আমরা সেটা বিবেচনায় নেয় না। বাস্তবতা হলো এই মুহূর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেও তিস্তা চুক্তি করতে পারবে না। এই চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের সম্মতি লাগবেই। ভারতের সরকার কাঠামোর মধ্যেই আপাতত এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ভবিষ্যত হয়তো এই চুক্তির ভবিতব্য নির্ধারণ করে দেবে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদী ৫৪টি। তিস্তা তার মধ্যে একটি মাত্র। দীর্ঘ দিন দু’দেশ তিস্তা নিয়ে পড়ে থাকায় বাকী নদীগুলোর হিস্যা ও ন্যায্যতা অন্ধকারেই রয়ে যায়। এবারের সফরের মাধ্যমে ৭টি অভিন্ন নদীর পানিবন্টনের পাশাপাশি নৌ-চলাচল ও বেসিনভিত্তিক ব্যবস্থাপনাসহ একটা বৃহত্তর ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত করার আনুষ্ঠানিকতা ভিত্তি পেলো যা দু’দেশের জন্যই মঙ্গলজনক। নয় কি? নাকি তিস্তা তিস্তা করে বাকী নদীগুলোর বিষয় বেমালুম ভুলে যাওয়ায় উচিত হবে?
অবশ্য বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করতে সক্ষম হলেও আজকের অতিমাত্রায় দেশপ্রেমিক লোকদের মধ্যমনি ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা বলতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন।
তাছাড়া সেই উচ্চকিত মধ্যমনি বলয় কখনো তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির জন্য তোড়জোড় করেছে এরকম প্রাগৈতিহাসিক কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
৪) আরও কিছু ইস্যু নিয়ে মনগড়া অপপ্রচার হচ্ছে যেমন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে ভারতের অধিকতর সমর্থন আদায় কিংবা জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি প্রসঙ্গ কেন যৌথ বিবৃতিতে এলো না?
আরে ভাই, বাংলাদেশ যখন সমুদ্র সীমা বিজয় করে তখনও তো আপনি সরকার প্রধানকে ন্যূনতম ধন্যবাদ জানাতেও কার্পণ্য করেছেন! যদিও আপনি জানেন যে এটা পুরো দেশের বিজয় এবং এই বিজয়ের কারিগর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আপনি দেশের সেই অর্জনকে সাধুবাদ জানাননি, কারণ এতে করে ব্যক্তিগতভাবে আপনার সরকার-বিরোধী অবস্থানে থেকেও একটু হলে সরকারের সাফাই হাওয়া হয়, তাই আপনি স্বাগত জানাননি। আর কোন কারণ আছে কি?
তাই, ভারত তার স্বার্থ সুরক্ষিত করতে রোহিঙ্গা ইস্যু কিংবা এনআরসি প্রসঙ্গ আনেনি। আর, বহুধা বিভক্ত এই দেশের স্বার্থ প্রকৃতভাবে সংরক্ষিত করতে একতা প্রয়োজন। আপনি সেটা করবেন না, তাই ভারতের সাথে শতভাগ ন্যায্যতা আমরা কখনোই আশা করতে পারি না।
এবার অন্য একটি প্রসঙ্গ:
================
ইসরাইল যা করুক যুক্তরাষ্ট্র চোখ বুঝে সমর্থন করে বলেই ইসরাইলিদের পক্ষে ফিলিস্থিন মুসলমান হত্যা যেন এক ধরণের আনন্দ উৎসব। অনেকেই ইসরাইলি এসব কুকর্ম দেখেও না দেখার ভান করে এবং ইসরাইলকে মানবিকতার বুলি আওড়াতে যায় না। ফলে ওরা আরও বেপরোয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন? কারণ একটাই, ওদের আছে পারমানবিক শক্তিসম্পন্ন মিসাইল ও আধুনিক প্রযুক্তি। কেউ তাই ইসরাইলকে ঘাটাতে যায় না। আবার মারি মারি করেও যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করে না। কারণ ইরানের আছে পারমানবিক অস্ত্র।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি মর্যাদাবান রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিরলস। তাঁর কাছে একটিই দাবি- -যেন বাংলাদেশের পারমানবিক শক্তি ও অস্ত্র অর্জনেও তিনি ভূমিকা নেন। না, আমরা কারও সাথে যুদ্ধ করবো না। কিন্তু অধিকার রক্ষায় পারমানবিক শক্তি আজ প্রতিষ্ঠিত। যেমনটি পেরেছে ইরান। আর শক্তি শুধু যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্যই নয়, শান্তি ও নিজের নিরাপত্তার জন্যও শক্তি দরকার। যেমনটি উত্তর কোরিয়া করেছে।
পুনশ্চ:
====
প্রতিবেশী যখন শক্তিশালী তখন নিজেদের স্বার্থ সমুন্নত রাখা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা ও সবচেয়ে শক্তিশালী জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিলে একই সাথে সাপোর্ট দিয়েও “রাশিয়ার ক্রিমিয়া” দখল অবমুক্ত করতে পারেনি। সেখানে কূটনীতির খেলায় বাংলাদেশ ভারতের সাথে ‘ফিফটি-ফিফটি’ উইন করবে, সে ভাবনা অবান্তর বৈকি।
(বিবিসি বাংলার মত সংবাদ মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানী নিয়ে ব্রেকিং নিউজ করার পর দু:খ প্রকাশ করে সেই নিউজ পরে তারা সংশোধন করে। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে নিউজ করার ক্ষেত্রে বিবিসি’র মত সংবাদ মাধ্যমের আরও যত্নবান হওয়া উচিত নয় কি?)!
লেখক: Md. Abu Nasher

No comments