মাহে রমজান : তাকওয়া ও খোদাভীতি অর্জনের মাস
বছর ঘুরে মুসলিম উম্মাহর কাছে আবার ফিরে এলো পবিত্র মাহে রমজান। আজ শুক্রবার রমজানুল মোবারকের প্রথম দিন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়টি হচ্ছে রোজা। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর প্রতি মাহে রমজানের রোজা পালনকে করা হয়েছে ফরজ (অবশ্য কর্তব্য); যা লঙ্ঘন করা কবিরা গোনাহ। একজন মুসলমানের জন্য নামাজ যেমন ফরজ, ঠিক তেমনি রমজান মাসের রোজা পালন করাও ফরজ।
সূরা বাকারার ১৮৩নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে মোমিনরা! তোমাদের প্রতি আমি মাহে রমজানের রোজাকে ফরজ করেছি। যেমন- ফরজ করেছিলাম তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতি। যাতে তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পারবে।’ একই সূরার ১৮৫নং আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘রমজান মাসে আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি, যা মানুষের জন্য জন্য পথপ্রদর্শক, হেদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে।’
এমনিভাবে হাদিসের মধ্যেও এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার আগের গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাতে ইবাদত করবে তার আগের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত ইবাদতে কাটাবে তার আগের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বোখারি, হাদিস নং-১৯০১; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ১৮১৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া-বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ গালমন্দ বা ঝগড়া-বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। সেই মহান সত্ত্বার কসম যার করতল গত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর সুঘ্রাণ হতেও উত্তম। রোজাদারের খুশির বিষয় দুইটি। যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। (সহিহ বোখারি, হাদিস নং-১৮০৫)।
এসব আয়াত ও হাদিসগুলো থেকে এটা প্রমাণিত যে, রমজানের রোজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। আল্লাহর ইচ্ছার সামনে নিজের বৈধ ইচ্ছা-চাহিদাগুলো জলাঞ্জলি দিয়ে পরকালমুখী নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের দীক্ষা নিয়ে একজন ব্যক্তি যাতে খোদাভীতি অর্জনে সক্ষম হতে পারে সে উদ্দেশ্যেই ফরজ করা হয়েছে মাহে রমজানে সিয়াম পালনের বিধান। বাঁচার প্রয়োজনে খাবার ও পানীয় গ্রহণ, জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য স্ত্রী-সহবাস মানব জাতির একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। কিন্তু মাহে রমজানের দিনের বেলায় একমাত্র আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য একজন মোমিন এসব থেকেও নিজেকে বিরত রাখেন। আর এভাবেই পুরো একটি মাসজুড়ে সিয়াম সাধনার পর আল্লাহর ইচ্ছা-অনিচ্ছার নিরিখে জীবন যাপনের মানসিকতা সৃষ্টি হয়, যাকে আল কোরআনের পরিভাষায় তাকওয়া বা খোদাভীতি বলা হয়।
রোজার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন। আর তাকওয়ার প্রতিদান জান্নাতি জীবন, যেখানে কল্পনাতীতভাবে পূরণ হবে মানুষের প্রতিটি ইচ্ছা-বাসনা। হৃদয়ে জাগ্রত হবে ঈমানী ভাব ও চেতনা। কানে ভেসে আসবে মহান আল্লাহর সেই পবিত্র আহ্বান, ‘হে মুতমায়িন (পরিতৃপ্ত) হৃদয়! ফিরে এসো তোমার প্রতিপালকের পানে, রাজি-খুশি হয়ে। প্রবেশ করো আমার বান্দাদের ভেতর, প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।’ (সূরা ফজর : ২৭-২৯)।
অতএব পবিত্র রমজান মাসে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের অংশীদার হতে হলে অবশ্যই আমাদের হালাল রুজি অন্বেষণ করতে হবে, দিবসে সিয়াম সাধনা করে রাতে মহান রবের দরবারে নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করতে হবে এবং সাধ্যানুযায়ী দান-খয়রাত করতে হবে। তাই আসুন... আমরা রমজানের করণীয়গুলো মেনে চলি এবং বর্জনীয়গুলো ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।
No comments