পাট থেকে বাই সাইকেল [ভিডিও]
বাংলাদেশের মানুষ দরজিবাড়িতে কাপড় বানিয়ে অভ্যস্ত। কম্পিউটারও হয়তো বানিয়ে
নেয় (সংযোজন) দোকান থেকে। কিন্তু বাইসাইকেল না। সাইকেলটা লোকে এখনো
রেডিমেডই কেনে। নিজের চাহিদামতো সাইকেল বানিয়ে নেওয়া বা অর্ডার দেওয়ার চলটা
এখনো শুরু হয়নি। তারপরও কেউ কেউ সাইকেল বানাচ্ছেন। তাঁদেরই একজন আবু
নোমান। বছর দুই ধরে হাতেই বানাচ্ছেন (হ্যান্ডমেইড) সাইকেল। এই তরুণের কাজ
একটু আলাদা। সাধারণ সাইকেলের পাশাপাশি তিনি পাট দিয়ে সাইকেল বানিয়েছেন।
পাঁটের আঁশ দিয়ে দ্বিচক্রযানের নমুনা সফলভাবেই তৈরি করতে পেরেছেন তিনি।
ভিডিও: SATV
কথা হচ্ছিল ঢাকার
মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে আবু নোমানের
দোকানে বসে। তিনি,
তাঁর ছোট
ভাই তানভীর
এবং আরেক
উদ্যোক্তা মিলে দোকানটা দিয়েছেন, নাম
সাইকেল জংশন। ‘হাতে
বানিয়ে সাইকেল
বিক্রির কাজটা
আমি হয়তো
একটু আগেভাগেই
শুরু করে
দিলাম’, কাঁধ
ঝাঁকিয়ে বললেন
নোমান।
পাটের সাইকেলের
কথা পাড়তেই
লাল-সবুজ
আর সোনালি
রঙের সাইকেলের
একটা ফ্রেম
নিয়ে এলেন
নোমান।
প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই একগাল হেসে
বললেন, ‘এটা
নমুনা (প্রোটোটাইপ)। একটাই
আছে।’
বানিয়েছেন ২০১৪-এর শেষ দিকে। ওজন
২ কেজি
৮০০ গ্রামের
মতো।
প্রথমবার বলে
ওজনটা বেশি
হয়ে গেছে। যেখানে
হাল জমানার
কার্বন ফাইবারের
ফ্রেমগুলোর ওজন হয় ৮০০ গ্রাম
থেকে ১
হাজার ৮০০
গ্রামের মতো। পরেরবার
ওজন আরও
কমিয়ে আনার
ব্যাপারে আশাবাদী
নোমান।
ফ্রেমটা ব্যবহারও করা
হয়েছে এরই
মধ্যে।
এর সঙ্গে
আরও সব
যন্ত্রাংশ জুড়ে দিয়ে গোটা একটা
সাইকেল বানানো
হয়েছিল।
সে সাইকেলে
করে গেল
বছর ১৬
ডিসেম্বর বিডিসাইক্লিস্টসের
বিজয় দিবস
রাইডে যোগ
দিয়েছিলেন নোমান। ফ্রেমটা এখন
খুলে রেখেছেন। এটা
একটা স্টিলের
ফ্রেমের মতোই
মজবুত।
সহজে ভাঙবে
না।
কম করে
হলেও ১০
বছর টিকবে। বানাতে
মজুরি বাদে
খরচ পড়েছে
১৫ হাজার
টাকা।
সময় লেগেছে
সাত দিন। ‘কিন্তু
এটা বানানোর
পেছনে পরিকল্পনা
ছিল মেলা
দিনের।
বছর দুই
তো হবেই,’
বললেন নোমান। ভবিষ্যতে
সাইকেলের হ্যান্ডেলবার,
সিট পোস্ট,
রিম, ফর্কও
পাট দিয়ে
বানানোর চেষ্টা
করবেন তিনি।
‘শুরুতে ইচ্ছা ছিল
কার্বন ফাইবারের
একটা ফ্রেম
বানানোর।
কিন্তু সেটা
হয়ে ওঠেনি। পরে
মনে হলো,
দেশের ঐতিহ্য
সোনালি আঁশ
দিয়ে ঢেউটিন
বানানোর নজির
যেহেতু আছে,
তাহলে সাইকেলের
ফ্রেম কেন
নয়!’ যেই
ভাবা সেই
কাজ।
লেগে পড়লেন
নোমান।
এক কেজি
পাট নিলেন,
সঙ্গে শক্তিশালী
আঠা-ইপক্সি
রেজিন।
গাণিতিক কিছু
হিসাব-নিকাশ
আর সাত
দিনের পরিশ্রম। তারই
ফসল সোনালি
আঁশের এই
ফ্রেম।
বানানোর প্রক্রিয়াটা জানতে
চাইলে নোমান
বলেন, খুব
সহজ বিষয়। একটা
দালান তৈরিতে
রড লাগে। রড হচ্ছে একটা
ভবনের কঙ্কাল। আর বালু, সিমেন্ট,
খোয়া এসবের
মিশ্রণ তো
লাগেই।
বিশেষ এই
ফ্রেমে পাটকে
রডের মতো
ব্যবহার করা
হয়েছে।
আর ইপক্সি
রেজিন নামের
শক্তিশালী আঠাটা হচ্ছে সেই মিশ্রণ। মূলত
এই দুইয়ের
মিশেলে ফ্রেমটা
দাঁড়িয়েছে।
এখন তাঁর
এই উদ্ভাবনের
প্যাটেন্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
পাট দিয়ে ঢেউটিন
বানানো গেলে
সাইকেলও বানানো
সম্ভব বলে
মন্তব্য করলেন
বাংলাদেশ পাট
গবেষণা ইনস্টিিটউটের
প্রধান বৈজ্ঞানিক
কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন। তবে এটা
কতটুকু পরিবেশবান্ধব
সেটা বিবেচনা
করতে হবে।
কারণ, পাটের
তৈরি ফ্রেমটা
মাটির সঙ্গে
না মিশে
গেলে পরিবেশের
ক্ষতির দিকটি
থেকেই যায়।
নোমান অবশ্য
দাবি করেছেন,
ব্যবহার শেষে
ফ্রেমটা টুকরো
টুকরো করে
ফেলে দিলে
মাটির সঙ্গে
মিশে যাবে।
ঢাকার আদাবরের ১৩
নম্বর সড়কে
ছোটখাটো একটি
কারখানা আছে।
সেখানে বসেই
গত দুই
বছরে ১০০-এর বেশি
স্টিলের সাইকেল
বানিয়ে গ্রাহকের
হাতে তুলে
দিয়েছেন। ভবিষ্যতে
পাটের সাইকেলও
মানুষের হাতে
তুলে দিতে
পারবেন বলে
আশাবাদী তিনি।
একদিন বিশ্বের
সবচেয়ে বড়
হ্যান্ডমেইড সাইকেলের কারখানা গড়ে তোলার
স্বপ্ন দেখেন
উদ্যমী এই
তরুণ।
উৎস: প্রথম আলো
No comments