যেখানে শেখ হাসিনা অনন্য ও অদ্বিতীয়
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি সব সময়
সহজ সরল পথে চলেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার
মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে পুরনো পাকিস্তানের ধারায়
চালিয়েছে সামরিক শাসকরা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী
জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে একটি পাকিস্তানপন্থী ভাবধারার দেশে পরিণত
করেছিলেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দল এবং
পাকিস্তানের দোসর যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুর্নবাসিত করেছিলেন।
সব থেকে বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল স্বাধীন
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তাঁর
বেঁচে যাওয়া রক্তের উত্তরসুরী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ
রেহেনাকে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত করে রেখেছিল ওই সময়ের জেনারেল জিয়ার
সামরিক শাসন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে দীর্ঘদিন নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়
দেশের বাইরে।
আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসুরী শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে
সম্মেলনের মাধ্যমে। তিনি দলের দায়িত্ব নিয়েই জেনারেল জিয়ার সামিরক শাসনের
রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই বাংলার মানুষের ভাত ও
ভোটের অথিকার আদায়ের সংগ্রামে যুক্ত হোন। শেখ হাসিনা মানুষের অধিকার আদায়ের
আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির বুকে চেপে বসা জগদ্বল পাথরের মত সামরিক
শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন এবং মানুষের ভোট অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সামনে
থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বার বার বুলেট ও গ্রেনেডের মুখ
থেকে বেঁচে ফেরা বহ্নিশিখা। তিনি তাঁর জীবন বাংলার মেহনতী দুখি মানুষের
কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণই তার রাজনীতির
দর্শন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে যেমন দৃঢ়
প্রতিজ্ঞ তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি উদার গণতান্ত্রিক ও
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেরও প্রতিচ্ছবি। তার রাজনীতির মূলমন্ত্র হলো জনগণের
জীবনমান উন্নয়ন। আর তাই বার বার স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তি তার উপর
বুলেট ও গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাকে শেষ করে দিতে চেয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই
জনগণের বিপুল ভালোবাসা ও আর্শিবাদে তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে
ফিরেছেন বাংলার মানুষের ভাগ্যন্নোয়নের জন্যই। ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু
অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে বিশ্বের
রাজনীতির ইতিহাসে সবচে কলঙ্কিত ঘটনা ঘটে। যুদ্ধক্ষেত্রে যে আর্জেস গ্রেনেড
ব্যবহার করা হয় সেই একই গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালানো হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী
ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার উপর। ইতিহাসের বর্বরোচিত ওই
গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমাননহ নিহত হয় ২৪ জন আওয়ামী লীগের
নেতা-কর্মী। বিভীষিকাময় গ্রেনেড হামলায় আহত আরো শত শত মানুষ। সেই গ্রেনেড
হামলার নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছিল বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম খালেদা
জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে
ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া হাওয়া ভবনে জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানের
সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছিল তারেক রহমান। ওই সব বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় আওয়ামী
লীগরে সমাবেশে হামলা চালানোর। একাধিক বৈঠকে তারেক রহমানের সাথে শেখ
হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নেয় তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র
প্রতিমন্ত্রী লুৎফর জামান বাবর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান
মোহম্মদ মুজাহিদ এবং আরো বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই
ছিল ওই হামলার প্রধান টার্গেট। মুফতি হান্নান পরে তার স্বীকারক্তিতে
বলেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট
সরকার ওই হামলার সুষ্ঠু বিচার তো করেই নি বরং হামলার পরে সমস্ত আলামত মুছে
ফেলতে চেয়েছে। নিরীহ এক জজ মিয়াকে আসামী বানিয়ে আষাঢ়ে গল্প ফাঁদতে থাকে।
বার বার মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে দেশের
সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে বিরল।
বাংলাদেশের পরম সৌভাগ্য যে, এদেশের মানুষ শেখ হাসিনার মত ভিশনারী, কর্মঠ ও
প্রচণ্ড সৎ এমন বিরল নেতা পেয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের বা উন্নয়নশীল দেশে একজন
শেখ হাসিনার মত নেতা দেশকে কিভাবে দ্রুত এগিয়ে নিতে পারেন তা শেখ হাসিনার
গতিশীল নেতৃত্ব না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে
হত্যার মাধ্যমে উল্টোপথে চলা বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ কখনো মসৃন ছিল। আর
শেখ হাসিনাকে পথ চলতে হয়েছে আরো কঠিন বন্ধুর পথে। বাংলাদেশের উন্নয়নের
রাজনীতিতে কখনো স্থিতিশীলতা আসেনি এতখানি যা শেখ হাসিনার সময়ে এসেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন নির্বাচতি বা অনির্বাচিত শাসক শেখ হাসিনার মত টানা
৯ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এই কথাটি এভাবে বলা যায় শেখ হাসিনার মত বিপুল
জনপ্রিয়তা এবং জনগণ বান্ধব নেতা হিসেবে টিকে থাকতে পারেনি। এই দিক বিবেচনা
করলে শেখ হাসিনা এমন এক রেকর্ড গড়েছেন যা এক কথায় অনন্য এবং অসাধারণ। শুধু
অসাধারণই না এই ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা অদ্বিতীয়ও বটে। সামনের দিনেও শেখ
হাসিনার মত বিপুল জনপ্রিয়তা এবং জনসম্পৃক্ততা ধরে রেখে এমন রেকর্ড কেউ করতে
পারবে বলে বর্তমানে দেশের কোন মানুষ বিশ্বাস করে না।
কোন প্রধানমন্ত্রী সৎ ও আন্তরিক থাকলে যে
দেশের উন্নয়ন হয় তার প্রমাণ শেখ হাসিনা। শুধু আন্তরিকতা বা সততায় শেখ
হাসিনার শক্তি না। তিনি বিশ্বাস করেন আমরা পারি, বাঙালীরা পারে। শেখ হাসিনা
বার বার একটি কথা বলেন আমরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন
করেছি তাই কোন বিজয়ী জাতি কখনো মাথা নত করে থাকতে পারেনা। এই একটি মন্ত্রই
শেখ হাসিনার হয়তো মূলমন্ত্র। তাই তো আমরা দেখি জাতির কলঙ্কতিলক যুদ্ধাপরাধী
যারা বাংলাদেশর মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাই শুধু করেনি হত্যা,
অগ্নিসংযোগ, লুট ও ধর্ষণের মত গুরুতর অপরাধ করেছিল তাদের বিচার করেছেন
তিনি। আর এই বিচার বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশী-বিদেশী নানা মহল
শেখ হাসিনার উপর প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ়তায়
সেটা সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করেও কোন
যুদ্ধাপরাধীকে বাঁচাতে পারেনি। এখানেই শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং দৃঢ়তার
প্রতি সবার অকুণ্ঠ সমর্থন।
এর আগের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে
বিদ্যুতের মত মৌলিক চাহিদার দাবিতে মানুষ রাস্তায় নেমেছে, প্রতিবাদ করেছে।
কিন্তু বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার বিদ্যুৎ তো দিতেই পারেনি উপরন্তু
বিদ্যুতের দাবিতে যে মানুষগুলো রাস্তায় নেমেছিল তাদেরকে গুলি করে মেরেছে।
সেই সময়ের সাথে বর্তমানের তুলনা করলে দেখা যায় শেখ হাসিনা সরকার প্রধান
হওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং চলতি ২০১৮ সালের মধ্যেই
বাংলাদেশ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের ৮৩ ভাগ মানুষ
বিদ্যৎ সুবিধার আওতায়। আর ২০১৮ সালের মধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা সম্ভব
হবে শুধুমাত্র শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে।
শেখ হাসিনার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ
এমন কিছুর সাক্ষী হয়েছে যা আমাদের কল্পনাতীত ব্যাপার ছিল। দেশী-বিদেশী
ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক যখন
বাংলাদেশর স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে অর্থায়ন প্রত্যাহার করে তখন শেখ
হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ পারে, আমরাও
পারি। সম্পূর্ণ দেশের টাকায় বাংলাদেশর ইতিহাসে সবচে বড় মেগা প্রজেক্ট এই
পদ্মাসেতুর কাজ এরই মধ্যে অর্ধেক শেষ হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সেতুর
মূল কাজ শুরু হয়ে গত বছরেই সেতুর প্রথম স্প্যান বসেছে। এভাবেই চলতি বছরের
শেষ নাগাদ আমাদের ইতিহাসে সবচে সফল মেগাপ্রজেক্টটি শেষ হবে। আর বাংলাদশে
অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে। সদ্য শেষ হওয়া
২০১৭ সালে অর্থনৈতিক সাফল্যে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশকে কান্ট্রি অব
দ্যা ইয়ার ঘোণষা করেছে বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকা দ্যা ইকোনোমিস্ট। অর্থনৈতিক
অগ্রতিতে বাংলাদেশ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার
নেতৃত্বে। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন
করেছে। আর এমন উচ্চ গতির প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ এই মুহূর্তে বর্তমানে আর
একটিও নেই। বাংলাদেশর মোট জিডিপির পরিমাণ এখন ২৫০ বিলিয়ন ডলার। মজার
ব্যাপার হলো দেশের মোট জিডিপি ১৫০ বিলিয়ন ডলার হতে সময় লেগেছে প্রায় ৩৯ বছর
আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ৯ বছরেই দেশ ১০০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি অর্জন
করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা
অপরিহার্য এবং একই সাথে এই কথাও সত্য যে সরকারের ধারাবাহিকতা ধাকলে উন্নয়ন
বেশি হয়। এই দুটি কারণ যখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়কালে
ঘটেছে তাই বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার পর এমন নজিরবিহীন উন্নয়ন প্রত্যক্ষ
করতে পারছে। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছেন জীবনভর জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু। তার রক্তের যোগ্য উত্তসুরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনাও একই পথের যাত্রী। পরম করুণাময় হয়তো তাকে বার বার বুলেট ও গ্রেনেডের
মুখ থেকে জীবিত ফিরিয়ে এনেছেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।
বাংলার মানুষের ভালোবাসার প্রতিদানও প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক
বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে। বর্তমানে বিদেশীরাও বাংলাদেশের সাফল্যের
উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে থাকেন। দেশে ও দেশের বাইরে ভিশনারী লিডার হিসেবে শেখ
হাসিনার যে ঈর্শনীয় সাফল্য তা এক কথায় অনন্য ও অসাধারণ।
No comments