মোবাইলের সমস্যায় ‘মোবাইল বাবা’
শখের মোবাইল ফোনের মজুত ভাণ্ডারে প্রায়
৩০০ বন্ধুর নম্বর৷ কিন্তু, কোন একজনকে কল করতে গেলেই, তার নম্বর পাওয়া
যাচ্ছে না৷ কন্টাক্ট লিস্টে দেখাচ্ছে মাত্র ৭০টি নম্বর আছে৷ আবার কখনও কখনও
রাতভর মোবাইল চার্জ হয়েছে, অথচ ঘুম থেকে উঠে দেখা গেল চার্জই হয়নি৷
চার্জবার সেই এক দাগ দেখাচ্ছে৷ নামি-অনামি অনেক মোবাইল ব্যবহারকারীদের এই
ধরণের সমস্যার মুখেই পড়তে হয়৷ আর সেই ভুক্তভোগী মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের
হাজারো সমস্যা হাসি মুখে সমাধান করে দিচ্ছেন ‘মোবাইল চিকিৎসক’৷ মুখে মুখে
সেই চিকিৎসকের নাম বদলে হয়ে গিয়েছে ‘মোবাইল বাবা’৷
সূর্যসারথি সরকার৷ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর
দিনাজপুরের ইসলামপুর পুর-শহরের রামকৃষ্ণপল্লীর বাসিন্দা৷ পেশায় প্রাথমিক
স্কুলের প্রধান শিক্ষক৷ কিন্তু, এই চেনা পেশা-পরিচয়ের বাইরে এখন তাঁর আরও
একটা বিষয়ে ব্যাপক পরিচিতি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে৷ যার পোশাকি নাম
হয়েছে ‘মোবাইল বাবা’৷ হ্যাঁ! শুনতে একটু অবাক লাগলেও, ইসলামপুর শহর ছাড়াও
আশপাশের মানুষের কাছে তিনি এখন এই নামেই পরিচিত৷ এমন কী, বিহার রাজ্যের
কিষণগঞ্জেও তাঁর মোবাইল বাবা নামটা পৌঁছে গেছে৷ কিন্তু, কেন দিনে দিনে এই
একটা অদ্ভুত নাম হয়ে গেল রামকৃষ্ণপল্লীর এক সময়ের চকলেট বয় সূর্যসারথির?
সবার হাতে হাতে এখন নামি-অনামি কোম্পানির
স্মার্টফোন৷ এমন অনেকেই আছে যে, মোবাইল ফোনের বহু ফিচারের কথা নিজেও জানে
না৷ সেটিংসের কোথায় কীভাবে কাজ করে, তাও অনেকের কাছে অজানা৷ তাই প্রায়
তাদের কোন কোনও সমস্যায় পড়তে হয়৷ ছোটখাট নানান সমস্যাতে পড়তেই হয়৷
আবার এমন কিছু সমস্যা আছে, যার কারণ বহু ক্ষেত্রেই মোবাইল সংস্থার সার্ভিস
সেন্টার কিংবা মোবাইল মেকানিকের কাছে দৌঁড়তে হয়৷ কিন্তু, আদতে মোবাইলে
তেমন কোন সমস্যাই ছিল না৷ অজ্ঞতার জন্য বহুক্ষেত্রেই উপভোক্তার পকেট থেকে
কাড়ি কাড়ি টাকা কেটে নেন সার্ভিস সেন্টার এবং মেকানিকরা৷ আর এই সমস্ত
সমস্যায় হাসিমুখে সমাধান করে দিচ্ছেন সূর্যসারথি৷ যার কারণে তিনি এখন সবার
কাছে মোবাইল বাবা নামেই পরিচিত হয়েছেন৷
এক একান্ত সাক্ষাৎকারে ইসলামপুরের এই
শিক্ষক জানালেন, কলকাতার বাইরে এই রাজ্যে মূলত ২০০৩ নাগাদ মোবাইলের ব্যবহার
ছড়িয়ে পড়ে৷ তখন থেকেই তিনি এই ফ্রি সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন৷ আসলে বাজারে
নতুন মোবাইল এলেই তিনি তা কিনতেন৷ শুধু জানার আগ্রহে সমস্ত সেটিংস ঘেঁটে
দেখতেন৷ম্যানুয়ালগুলো মন দিয়ে পড়তেন। এই ভাবেই মোবাইলের সফটওয়ার
সম্পর্কে প্রচুর তথ্য মগজাস্ত করেছেন। প্রথমদিকে বন্ধু-বান্ধবরা কোন
সমস্যায় পড়লে, তার সমাধান করেছেন৷ কিন্তু, দিনে দিনে মুখে মুখে সেই কথা
আশপাশে প্রচুর ছড়িয়েছে৷ তাই দিনে তিন-চারজন তার কাছে হাজির হচ্ছেন তাদের
নষ্ট হয়ে যাওয়া মোবাইল ঠিক করে দেওয়ার জন্য৷
তিনি আরও জানালেন, প্রায় প্রতিদিন
সন্ধ্যা হলেই ইসলামপুর বাস টার্মিনাস আড্ডার আসরে যান৷ মোবাইলের নানা
সমস্যা নিয়ে সেখানেই সবাই হাজির হয়ে যান৷ আবার কেউ কেউ বাড়িতেও হানা
দেন৷ তবে, তাতে বিরক্তি প্রকাশ না করেই হাসিমুখে সবার সমস্যা সমাধান করে
দেন তিনি৷ মজার কথা, ডাক্তারদের মতো তিনি মোবাইলের সমস্যা সমাধানের জন্য
বাড়িতেও কল পান৷ তাতেও তিনি কারও কারও বাড়িতে গিয়ে হাজির হন৷ না, এই
মুঠোফোনের সমস্যা হাসিমুখে সমাধান করে দেওয়ার জন্য কোন চার্জও তিনি নেন
না৷ শুধু কি তাই, অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল মেকানিকরাও ব্যর্থ হলে সূর্যের
কাছেই পাঠিয়ে দেয়৷ বিষয়টা বেশ মজার ছলেই এক দশক ধরে চালিয়ে আসছেন
ইসলামপুরের মোবাইল বাবা৷
সূর্যসারথি বললেন, ‘মূলত সফটওয়ার
সংক্রান্ত সমস্যা চোখের পলকে সামলে দিই৷ আসলে মোবাইল ফোন কিনে অনেকেই
ম্যানুয়ালটা মন দিয়ে পড়ে দেখেন না৷ আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সফটওয়ার
আপডেট না করার জন্যও সমস্যা হয়’৷ তা করে দিলেই সমস্যা মিটে যায়৷ তবে
সবচেয়ে বেশি সমস্যা আসে জিওনি মোবাইলের৷ ধরুন মোবাইল ৩০০ নম্বর-নাম
রয়েছে৷ অথচ লিস্টে দেখা যাচ্ছে ৭০টি নাম-নম্বর৷ বেশি ভাগই সমস্যার মধ্যে
রয়েছে ব্যাটারির চার্জের৷ রাতভর ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার পরও দেখাচ্ছে কোন
চার্জ নেই৷ এসবই সফটওয়ারের জন্য৷ কোন কোন মোবাইলে সেটে আবার দেখা যাচ্ছে,
দুটো সিম ভরা৷ কিন্তু, ডিসপ্লেতে ক্রশ দেখাচ্ছে৷
তিনি বললেন, সবই খুব ছোটখাট বিষয়৷ সেই
সবই সমাধানের জন্যই সবাই আমার কাছে ছুটে আসে, ভরসা করে৷ এসব করে দিতে সত্যি
খুব ভালোই লাগে৷ অনেকেই এর জন্য চার্জ দিতে চান৷ কিন্তু, কারও কাছে কোনদিন
কিছু নিইনি৷ সারাই মোবাইল হাতে পাওয়ার পর সবার হাসিটাই সবচেয়ে বড় পাওনা
মোবাইল বাবার৷
No comments